পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫ প্রথম অধ্যায় : মধুকর বংশ বর্ণন 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত করিতেছে যে, আদিদেবের সময় হইতেই প্রাকৃতিক নিয়মে বরবক্রের গতি পরিবর্তিত হইতে থাকে, এবং এই সময়েই তাহা সুসম্পন্ন হয়। ফলতঃ বরবক্রের পরিত্যক্ত সেই ভূভাগই বরগঙ্গা নামে খ্যাতি লাভ করে। পরে চণ্ডীদেবীকে তদীয় পিতা কর্তৃক সেই ভূমিই প্রদত্ত হইয়াছিল। মধুকর পত্নীসহ বরগঙ্গাবাসী হইলেন। নদীর মধ্যে মধ্যে আবৰ্ত্তময় গভীর স্থানকে এদেশে “ডহর” বলা হয়। কথিত আছে তত্ৰত একটি ডহরেই চণ্ডীদেবী প্রথমে গঙ্গার দর্শন বা কৃপা নিদর্শন ও প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হন। এবং সেই জন্য তাহা “চণ্ডীডহর” নামেই খ্যাত আছে। চণ্ডীডহরের পশ্চিম “চণ্ডীপুর” গ্রামে হিরণ্যগর্ভ এই গ্রাম কন্যাকে দিয়াছিলেন। কিন্তু চণ্ডীদেবী চণ্ডীপুরে অবস্থিতি না করিয়া স্বামীর সহিত নিজ বরুঙ্গাতেই বসতি করেন। বংশ বিস্তার কাল সহকারে চণ্ডীর গর্ভে মধুকরের চারিপুত্রের জন্ম হয়। ইহাদের নাম কীৰ্ত্তিদ, রঙ্গদ, উপেন্দ্র ও কৃত্তিবাস এই চারি পুত্রের জন্মের পর চণ্ডী পুনৰ্ব্বার গর্ভবতী হন, কিন্তু সেবার মনুষ্য শিশুর পরিবৰ্ত্তে একটি সপশিশু জাত হয়। ধাৰ্ম্মিক জননী ইহাকে ফেলিয়া না দিয়া দুগ্ধ দানে প্রতিপালন করিতেন । মধুকর মিশ্রের পুত্ৰগণ যখন প্রাপ্তবয়স্ক হইয়া উঠিলেন, তখন তিনি তাহদের বিবাহাদি দিয়া সাংসারিক সমস্ত ভার তাহদের উপর ন্যস্ত করতঃ ধৰ্ম্ম-কৰ্ম্মে রত হইলেন। কথিত আছে যে এই সময় একদা কীৰ্ত্তিদ-পত্নী শাশুড়ীর আজ্ঞায় সপকে দুগ্ধ দিতে গিয়া তৎপ্রতি অত্যাচার করায় ফণী ক্রুদ্ধ হইয়া বনে চলিয়া যান, এই ঘটনার পব মধুকর মিশ্র ও চণ্ডীদেবী কাশীধামে গমন করেন।১° ৭ “রামণের বসতি স্থান বড়গঙ্গা গ্রামে। বিয়া কবি মধু মিশ্র বৈল সেই গ্রামে। —প্রেমবিলাস গ্রন্থ । ৮ শ্ৰীমন্মধুকর মিশ্রের বংশাবলী তালিকা ক খ পবিশিষ্টে দ্রষ্টব্য। শ্রীচৈতন্য চবিতামৃত ও চৈতন্য ভাগবতাদি গ্রন্থের ও প্রাচীন বংশ তালিকা মতে উপেন্দ্র মিশ্রের ও তৎ পিতাব নাম আমবা লিপিবদ্ধ করিলাম। উপেন্দ্র মিশ্রের পুত্ৰই জগন্নাথ মিশ্র কিন্তু অন্যান্য লেখকগণ ইহাদের নাম বিভিন্ন রূপে লিখিয়াছেন। বৈদিক কুলমঞ্জুরী ও কুলপঞ্জিকা মতে উপেন্দ্র মিশ্রের পিতার নাম মধুকর স্থলে যদুনাথ লিখিত হইয়াছে তাহাব দশম পুরুষ উদ্ধে কনোজা বমানাথের পুত্র শ্রীমানকে ইহার পূৰ্ব্বপুরুষ বলা গিয়াছে। কিন্তু গোপীনাথ কষ্ঠাভবণ মতে উপেন্দ্র নামের স্থলে রমাপতি ও তৎপিতা মধুকবের নাম শিবরাম বলা হইযাছে এবং তাহাকে পূৰ্ব্বোক্ত শ্রীমান বংশ্য না বলিয়া, শ্রীমানেব ভ্রাতা জিতামিশ্রেব বংশীয় বলিযা প্রকাশ করা হইয়াছে ! আবাব কবি জয়ানদেব মতে উপেন্দ্র মিশ্রের নাম জনাৰ্দ্দন ও তৎপিতা মধুকব ধনঞ্জয় হইয়া গিযাছেন!!! এরূপ বৈষম্যের কাবণ কি ? শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ সম্বন্ধেই যখন এরূপ, তখন বঙ্গের সামাজিক ইতিহাসে সত্য প্রকটন কিরূপ দুরূহ যে, মধুকর মিশ্র ইহাই বোধ হয় যে, মধুকর মিশ্র শ্রীহট্টে নবাগত; স্থানান্তরে তাহার অন্য নাম থাকা অসম্ভব নহে এবং শ্রীহট্টে তিনি মধুকর নামেই পবিচিত হন। পক্ষান্তরে অন্যান্য কুলগ্রন্থ রচয়িতাদের ভ্রম হওয়াও বিচিত্র নহে;ত্রম না হইলে বিভিন্ন কুলগ্রন্থে বিভিন্ন নাম থাকা অসম্ভব হইত। জয়ানন্দের ভ্রম স্পষ্টতঃ দেখা যায়। তিনি উপেন্দ্র নামই উল্লেখ করেন নাই। এস্থলে উপেন্দ্র মিশ্রের পৌত্র প্রদ্যুম্ন মিশ্র, ও গৌরপার্ষদ মুরারি গুপ্তের মত এবং প্রেমবিলাসাদি অন্যান্য প্রামাণ্য বৈষ্ণব গ্রন্থের বিবরণ গ্রহণ করাই সঙ্গত। বংশ তালিকায়ও তাহার সহিত ঐক্য হয়। পরবর্তী ৩য় অধ্যায়ে উপেন্দ্র মিশ্রের বংশ কথা দ্রষ্টব্য। ১০. "তবে মধুকর মিশ্র চণ্ডিকা সহিতে। পুত্ৰগণে রাজ্য দিয়া গেলেন কাশীতে।"- শ্রীচৈতন্যরত্নাবলী। R