পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যুক্তধারী $56 বিশ্বজিৎ । মহাদেবকে শক্ত করতে ভয় নেই ? রণজিং। যিনি উত্তরকুটের পুত্রদেবতা, আমাদের জয়ে তারই জয় । সেইজন্তেই আমাদের পক্ষ নিয়ে তিনি তার নিজের দান ফিরিয়ে নিয়েছেন। তৃষ্ণায় শূলে শিৰতরাইকে বিদ্ধ করে তাকে তিনি উত্তরকুটের সিংহাসনের তলায় ফেলে দিয়ে যাবেন । ե f বিশ্বজিং। তবে তোমাদের পূজা পুজাই নয়, বেতন। রণজিং। খুড়া মহারাজ, তুমি পরের পক্ষপাতী, আত্মীয়ের বিরোধী। তোমার শিক্ষাতেই অভিজিৎ নিজের রাজ্যকে নিজের বলে গ্রহণ করতে পারছে না । * বিশ্বজিং । আমার শিক্ষায় ? একদিন আমি তোমাদেরই দলে ছিলেম না ? চওপত্তলে যখন তুমি বিদ্রোহ স্বষ্টি করেছিলে সেখানকার প্রজার সর্বনাশ করে সে বিশ্লোহ আমি দমন করি নি ? শেষে কখন ওই বালক অভিজিৎ আমার হৃদয়ের মধ্যে এল— আলোর মতো এল। অন্ধকারে না দেখতে পেয়ে যাদের আঘাত করেছিলুম তাদের আপন বলে দেখতে পেলুম। রাজচক্রবর্তীর লক্ষণ দেখে যাকে গ্রহণ করলে তাকে তোমার ওই উত্তরকুটের সিংহাসনটুকুর মধ্যেই আটকে রাখতে চাও? রণজিৎ । মুক্তধারার ঝরনাতলায় অভিজিংকে কুড়িয়ে পাওয়া গিয়েছিল এ-কথা তুমিই ওর কাছে প্রকাশ করেছ বুঝি ? * বিশ্বজিং। ই, আমিই। সেদিন আমাদের প্রাসাদে ওর দেয়ালির নিমন্ত্রণ ছিল। গোধূলির সময় দেখি অলিন্দ্রে ও একলা দাড়িয়ে গৌরীশিখরের দিকে তাকিয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করলুম, “কী দেখছ, ভাই ? সে বললে, “ষে-সব পথ এখনও কাটা হয় নি ওই দুৰ্গম পাহাড়ের উপর দিয়ে সেই ভাবীকালের পথ দেখতে পাচ্ছি—দুরকে নিকট করবার পথ।” শুনে তখনই মনে হল, মুক্তধারার উৎসের কাছে কোন ঘরছাড়া মা ওকে জন্ম দিয়ে গেছে, ওকে ধরে রাখবে কে ? আর থাকতে পারলুম না, ওকে বললুম, “ভাই, তোমার জন্মক্ষণে গিরিরাজ তোমাকে পথে অভ্যর্থনা করেছেন,—ঘরের শঙ্খ তোমাকে ঘরে ডাকে নি ।” রণজিৎ । এতক্ষণে বুঝলুম। বিশ্বজিং। কী বুঝলে ? # রণজিৎ । এই কথা শুনেই উত্তরকুটের রাজগৃহ থেকে অভিজিতের মমতা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । সেইটেই স্পর্ধ করে দেখাবার জন্তে নন্দিসংকটের পথ সে খুলে দিয়েছে। বিশ্বজিৎ । ক্ষতি কী হয়েছে ? যে পথ খুলে স্বায় সে পথ সকলেরই—যেমন উত্তরকুটের তেমনি শিবতরাইয়ের ।