পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 রবীন্দ্র-রচনাবলী করে পরিপূর্ণ শক্তিতে দেশের সেবায় নিযুক্ত হবে, এমন আত্মবিড়ম্বনার কথা আমরা যেন না বলি। যে মানুষ বলে 'আগে ফাউণ্টেন-পেন পাব তার পরে মহাকাব্য লিখব? বুঝতে হবে তার লোভ ফাউণ্টেন-পেনের প্রতিই, মহাকাব্যের প্রতি নয়। যে দেশাত্মবোধী বলে, ‘আগে স্বরাজ পেলে তার পরে স্বদেশের কাজ করব? তার লোভ পতাকাওড়ানো উর্দি-পরা স্বরাজের রঙকরা কাঠামোটার পরেই। একজন আর্টিস্টকে জানি, তিনি অনেক দিন থেকে বলে এসেছিলেন, রীতিমত স্ট ডিয়ো আমার অধিকারে না পেলে আমি হাতের কাজ দেখাতে পারব না। তার স্ট ডিয়ে জুটল, কিন্তু হাতের কাজ আজও এগোয় না। যতদিন স্ট ডিয়ো ছিল না ততদিন ভাগ্যকে ও অন্ত সকলকে কৃপণ বলে দোষ দেবার স্বযোগ তার ছিল, স্ট ডিয়ো পাবার পর থেকে তার হাতও চলে ন মুখও চলে না। স্বরাজ আগে আসবে, স্বদেশের সাধনা তার পরে, এমন কথাও তেমনিই সত্যহীন, এবং ভিত্তিহীন এমন স্বরাজ । অগ্রহায়ণ ১৩৩৬ হিন্দুমুসলমান ভারতবর্ষের সকল প্রদেশের সকল সমাজের ঐক্যে প্রতিষ্ঠিত এক মহাজাতিকে জাগিয়ে তুলে তার একচ্ছত্র আসন রচনা করব বলে দেশনেতারা পণ করেছেন। ঐ আসন জিনিসটা, অর্থাৎ যাকে বলে কনস্টটু্যগুন, ওটা বাইরের, রাষ্ট্রশাসনব্যবস্থায় আমাদের পরস্পরের অধিকার-নির্ণয় দিয়ে সেটা গড়েপিটে তুলতে হবে। তার নানা রকমের নমুনা নানা দেশের ইতিহাসে দেখেছি, তারই থেকে যাচাই বাছাই করে প্ল্যান ঠিক করা চলছে। এই ধারণা ছিল, ওটাকে পাকা করে খাড়া করবার বাধা বাইরে, অর্থাৎ বর্তমান কর্তৃপক্ষদের ইচ্ছার মধ্যে। তারই সঙ্গে রফা করবার, তক্রার করবার কাজে কিছুকাল থেকে আমরা উঠে পড়ে লেগেছি। যখন মনে হল কাজ এগিয়েছে, হঠাৎ ধাক্কা খেয়ে দেখি, মস্ত বাধা নিজেদের মধ্যেই। গাড়িটাকে তীর্থে পৌছে দেবার প্রস্তাবে সারখি যদি-বা আধ-রাজি হল ওটাকে আস্তাবল থেকে ঠেলে বের করবার সময় ছশ হল, এক গাড়িটার দুই চাকায় বিপরীত রকমের অমিল, চালাতে গেলেই উলটে পড়বার জো হয়। যে বিরুদ্ধ মানুষটার সঙ্গে আমাদের বাইরের সম্বন্ধ, বিবাদ করে একদিন তাকে হটিয়ে বাহির করে দেওয়া দুঃসাধ্য হলেও নিতান্ত অসাধ্য নয়, সেখানে আমাদের