পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s༦༤ ། রবীন্দ্র-রচনাবলী ফল দেখে লজ্জা পাবেন, কিন্তু দোষ দেবেন মদিরাকে। যদি অবশেষে উমির সম্পত্তির উপর নির্ভর করা অবশু হয়ে ওঠে তা হলে সেই আত্মবিমাননার ক্ষোভে উৰ্মিকে মুহূর্তে মুহূর্তে জালিয়ে মারবেন। J এ দিকে মথুরের সঙ্গে সমস্ত হিসেবপত্র শোধ করতে গিয়ে শশাঙ্ক হঠাৎ জানতে পেরেছে যে শর্মিলার সমস্ত টাকা ডুবেছে তার ব্যবসায়ে। এ কথা শৰ্মিলা এত দিন তাকে জানায় নি, মিটমাট করে নিয়েছিল মথুরের সঙ্গে। শশাঙ্কের মনে পড়ল, চাকরির অন্তে সে একদিন শমিলার টাকা ধার নিয়েই গড়ে তুলেছিল তার ব্যাবসা । আজ নষ্ট ব্যাবসার অন্তে সেই শৰ্মিলারই ঋণ মাথায় করে চলেছে সে চাকরিতে। এ ঋণ তো আর নামাতে পারবে না । চাকরির মাইনে দিয়ে কোনো কালে শোধ হবার রাস্তা কই । আর দিন-দশেক বাকি আছে নেপাল-যাত্রার। সমস্ত রাত ঘুমোতে পারে নি। ভোরবেলায় শশাঙ্ক ধড়ফড় করে বিছানা থেকে উঠেই আয়নার টেবিলের উপরে হঠাৎ সবলে মুষ্টিৰাত করে বলে উঠল, “যাব না নেপাল।” দৃঢ় পণ করলে, “আমরা দুজনে উৰ্মিকে নিয়ে কলকাতাতেই থাকব— ভ্ৰকুটিকুটিল সমাজের ক্রুর দৃষ্টির সামনেই। আর, এইখানেই ভাঙা ব্যাবসাকে আর-একবার গড়ে তুলব। এই কলকাতাতেই বসে।” যে-ষে জিনিস সঙ্গে যাবে, যা রেখে যেতে হবে, শমিলা বসে বসে তারই ফর্দ করছিল একটা খাতায় । ডাক শুনতে পেলে, “শমিলা ! শৰ্মিলা ।” তাড়াতাড়ি খাতা ফেলে ছুটে গেল স্বামীর ঘরে। অকস্মাৎ অনিষ্টের আশঙ্কা করে কম্পিতহদয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “কী হয়েছে।” বললে, “বাব না নেপালে। গ্রাহ করব না সমাজকে। থাকব এইখানেই ।” শমিলা জিজ্ঞাসা করলে, “কেন, কী হয়েছে।” শশাঙ্ক বললে, “কাজ অাছে।” সেই পুরাতন কথা— কাজ আছে। শৰ্মিলার বুক দুরুহুরু করে উঠল । “শমি, ভেবো না আমি কাপুরুষ । দায়িত্ব ফেলে পালাব আমি, এত অধঃপতন কল্পনা করতেও পার ?” শৰ্মিলা কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বললে, “কী হয়েছে আমাকে বুঝিয়ে বলে।” শশাঙ্ক বললে, “আবার ঋণ করেছি তোমার কাছে, সে কথা ঢাকা দিয়ো না ।” শমিলা বললে, “আচ্ছা, বেশ ।”