পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঞ্চয় ©ጭ » আর দরজার কাছে বসিয়া তুলসীদাসের রামায়ণ স্বর করিয়া পড়িতেছে। আমি তাহার ভাষা বুঝি না। আমার কেবলই মনে হয়, একটার পর আর একটা শৰ চলিয়া চলিয়া যাইতেছে ; তাহদের কোনো সম্বন্ধ জানি না । ইহাই মৃত্যুর রূপ ; ইহাই অর্থহীনতা। ইহাতে কেবল পীড়া দেয়। যখন ভাষা বুঝি, যখন অর্থ পাই, তখন বিচ্ছিন্ন শব্দগুলিকে আর শুনি না—তখন অর্থের অনবচ্ছিন্ন ঐক্যধারাকে দেখি, তখন অখণ্ড অমৃতকে পাই, তখন দুঃখ চলিয়া যায়। তুলসীদাসের রামায়ণে অর্থের অমৃত শবের খণ্ডতাকে পূর্ণ করিয়া দেখাইতেছে। সেই পূর্ণাটকে দেখাই তুলসীদাসের রামায়ণ পড়িবার চরম উদেপ্ত—যতক্ষণ সেই উদ্দেশু সিদ্ধ না হইবে ততক্ষণ প্রত্যেক শব্দই কেবল আমাদিগকে দুঃখ দিবে। ততক্ষণ পাঠকের মন কেবলই বলিতে থাকিবে, অবিশ্রাম শবের পর শক লইয়া আমি কী করিব—অমৃত যদি না পাই তবে ইহাতে আমার কিসের প্রয়োজন । । هي আমাদেরও সেই কান্না । আমরা যখন কেবলই অস্তহীন ব্যাপ্তির গম্যহীন পথে চলি তখন প্রত্যেক পদক্ষেপ নিরর্থক হইয়া আমাদিগকে কষ্ট দেয়—একটি পরিপূর্ণ পরিসমাপ্তির সঙ্গে যোগ করিয়া যখন তাহাকে দেখি তখনই তাহার সমস্ত ব্যর্থতা দূর হইয়া যায়। তখন প্রতিপদেই আমাদিগকে আনন্দ দিতে থাকে। তখন মৃত্যুইআমাদের কাছে মিথ্যা হইয়া যায়। তখন এক অধও অমৃতে জগৎকে এবং জীবনকে à আদ্যন্ত পরিপূর্ণ দেখিয়া আমাদের সমস্ত দারিত্র্যের অবসান হয়। তখন সারি গা মাৱ । অরণ্যে ঘুরিয়া ঘুরিয়া ক্লান্ত হইয়া মরি না-রাগিণীর পরিপূর্ণ রসের সমগ্রতায় নিমগ্ন হইয়া আশ্রয় লাভ করি । পৃথিবী জুড়িয়া নানা দেশে নানা কালে নানা জাতির নানা ইতিহাসে মানুষ এই রাগিণী শিখিতেছে। যে এক অখণ্ড পরিপূর্ণ আনন্দ হইতে বিশ্বজগৎ নব নব তানের মতো কেবলই আকাশ হইতে আকাশে বিস্তীর্ণ হইতেছে — সেই আনন্দ-রাগিণী মানুষ সাধিতেছে । ওস্তাদের ঘরে তাহার জন্ম, পিতার কাছে তাহার শিক্ষা । পিতার অনাদি বীণাষন্ত্রের সঙ্গে সে সুর মিলাইতেছে। সেই একের মুরে যতই তাহার সুর মিলিতে থাকে, সেই একের আনন্মে যতই তাহার আনন্দ নিরবচ্ছিন্ন হইয় উঠতে থাকে, বৃন্থর তানমানের মধ্যে ততই তাহার বিশ্ন কাটিয়া যায়, দুঃখ দূর হয়— বহুকে ততই সে আনন্দের লীলা বলিয়া দেখে ; বন্থর মধ্যে তাহার ক্লাস্তি আর থাকে না, সমস্তের সামঞ্জস্তকে সে একের মধ্যে লাভ করিয়া বিক্ষেপের হাত হইতে রক্ষা পায় । ধর্ম সেই সংগীতশালী যেখানে পিতা তাহার পুত্রকে “গান শিখাইতেছেন, পরমাত্মা হইতে আত্মায় মুর সঞ্চারিত হইতেছে। এই সংগীতশালায় যে সর্বত্রই সংগীত পরিপূর্ণ হইয়া