পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

さ○ケ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমার উত্তরের অপেক্ষা না রাখিয়া সে আপনিই বলিয়া উঠিল, “ন, না, এই আমার ভালো। আমার মাগিয়া-খাওয়া অন্নই অমুত ।” তাহার কথার ভাবখানা আমি বুঝিলাম। প্রতিদিনই যিনি নিজে অন্ন জোগাইয়া দেন ভিক্ষার অন্নে তাহাকেই মনে পড়ে । আর, ঘরে মনে হয়, আমারই অন্ন আমি নিজের শক্তিতে ভোগ করিতেছি । ইচ্ছা ছিল তাহার স্বামীর ঘরের কথা জিজ্ঞাসা করি, কিন্তু সে নিজে বলিল না, আমিও প্রশ্ন করিলাম না । এখানকার যে-পাড়ায় উচ্চবর্ণের ভদ্রলোকে থাকে লে-পাড়ার প্রতি বোষ্টমীর শ্রদ্ধা নাই । বলে, ঠাকুরকে উহারা কিছুই দেয় না অথচ ঠাকুরের ভোগে উহারাই সব চেয়ে বেশি করিয়া ভাগ বসায় । গরিবরা ভক্তি করে আর উপবাস করিয়া মরে । এ পাড়ার দুষ্কৃতির কথা অনেক শুনিয়াছি, তাই বলিলাম, “এই-সকল দুর্মতিদের মাঝখানে থাকিয়া ইহাদের মতিগতি ভালো করে, তাহ হইলেই তো ভগবানের সেবা হইবে।” এই রকমের সব উচুদরের উপদেশ অনেক শুনিয়াছি এবং অন্তকে শুনাইতেও ভালোবালি । কিন্তু, বোষ্টমীর ইহাতে তাক লাগিল না। আমার মুখের দিকে তাহার উজ্জল চক্ষু দুটি রাখিয়া সে বলিল, “তুমি বলিতেছ, ভগবান পাপীর মধ্যেও আছেন, তাই উহাদের সঙ্গ করিলেও তাহারই পূজা করা হয় । এই তো ?” আমি কহিলাম, *হঁ৷ ” সে বলিল, “উহারা যখন বাচিয়া আছে তখন তিনিও উহাদের সঙ্গে অাছেন বইকি। কিন্তু, আমার তাহাতে কী। আমার তো পূজা ওখানে চলিবে না ; আমার ভগবান যে উহাদের মধ্যে নাই । তিনি যেখানে আমি সেখানেই তাহাকে খুজিয়া বেড়াই ।” বলিয়া সে আমাকে প্রণাম করিল। তাহার কথাটা এই যে, শুধু মত লইয়া কী হইবে— সত্য ৰে চাই । ভগবান সর্বব্যাপী এট। একটা কথা, কিন্তু যেখানে আমি র্তাহাকে দেখি সেখানেই তিনি আমার সত্য । a এত বড়ো বাহুল্য কথাটা ও কোনো কোনো লোকের কাছে বলা আবশ্বক যে, আমাকে উপলক্ষ্য করিয়া বোষ্টমী যে ভক্তি করে আমি তাহা গ্রহণও করি না, ফিরাইয়াও দিই না । এখনকার কালের ছোয়াচ অামাকে লাগিয়াছে । আমি গীত পড়িয়া থাকি এবং বিদ্বান লোকদের দ্বারস্থ হইয়া তাহাদের কাছে ধর্মতত্বের অনেক স্বন্ধ ব্যাখ্যা শুনিয়াছি।