পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՎՉՑԵր রবীন্দ্র-রচনাবলী বিনোদিনী। চলুন, তাহাকে খুজিয়া বাহির করিগে । মহেন্দ্র। তাহাকে কেহ চুরি করিয়া লইবে, এমন আশঙ্কা নাই। না খুজিলেও পাওয়া যাইবে । বিনোদিনী । কিন্তু তিনি হয়তো আপনার জন্য ভাবিয়া মরিতেছেন, পাছে দুর্লভ রত্ব খোওয়া যায়। র্তাহাকে সাস্বনা দিয়া আসা যাক । জলাশয়ের ধারে প্রকাণ্ড একটা বাধানে বটগাছ আছে, সেইখানে বিহারী তাহার প্যাকবাক্স খুলিয়া একটি কেরোসিন-চুলা বাহির করিয়া জল গরম করিতেছে। সকলে আসিবামাত্র আতিথ্য করিয়া বাধা বেদির উপর বসাইয়া এক-এক পেয়ালা গরম চা এবং ছোটো রেকাবিতে দুই একটি মিষ্টীয় ধরিয়া দিল । বিনোদিনী বার বার বলিতে লাগিল, “ভাগ্যে বিহারীবাবু সমস্ত উদযোগ করিয়া আনিয়াছিলেন, তাই তো রক্ষা, নহিলে চা না পাইলে মহেন্দ্রবাবুর কী দশা হইত।” চা পাইয়া মহেন্দ্র বঁাচিয়া গেল, তবু বলিল, “বিহারীর সমস্ত বাড়াবাড়ি । চড়িভাতি করিতে আসিয়াছি, এখানেও সমস্ত দস্তুরমতো আয়োজন করিয়া আসিয়াছে । ইহাতে মজা থাকে না ।” বিহারী কহিল, "তবে দাও ভাই তোমার চায়ের পেয়ালা, তুমি না খাইয়া মজা করোগে– বাধা দিব না ।” বেলা হয়, চাকররা আসিল না । বিহারীর বাক্স হইতে আহারাদির সর্বপ্রকার সরঞ্জাম বাহির হইতে লাগিল । চাল-ডাল, তরি-তরকারি এবং ছোটো ছোটো বোতলে পেষা মশলা আবিষ্কৃত হইল। বিনোদিনী আশ্চর্য হইয়া বলিতে লাগিল, “বিহারীবাবু, আপনি যে আমাদেরও ছাড়াইয়াছেন। ঘরে তো গৃহিণী নাই, তবে শিথিলেন কোথা হইতে ।” বিহারী কহিল, "প্রাণের দায়ে শিথিয়াছি, নিজের যত্ব নিজেকেই করিতে छ्ध् ॥“ বিহারী নিতান্ত পরিহাস করিয়া কহিল, কিন্তু বিনোদিনী গম্ভীর হইয়া বিহারীর মুখে করুণচক্ষের কৃপা বর্ষণ করিল। বিহারী ও বিনোদিনীতে মিলিয়া রাধাবাড়ায় প্রবৃত্ত হইল। আশা ক্ষীণ সংকুচিত ভাবে হস্তক্ষেপ করিতে আসিলে, বিহারী তাহাতে বাধা দিল । অপটু মহেন্দ্র সাহায্য করিবার কোনো চেষ্টাও করিল না। সে গুড়ির উপরে হেলান দিয়া একটা পায়ের উপরে আর-একটা পা তুলিয়া কম্পিত বটপত্রের উপরে রৌদ্রকিরণের নৃত্য দেখিতে লাগিল ।