চোখের বালি 8b"> মহেঞ্জ আশ্চর্য হইল। বিনোদিনী স্বভাবতই শৌখিন ছিল। পূর্বে দারিত্র্যের কোনো লক্ষণ তাহার কাছে প্রীতিকর ছিল না ; নিজের সাংসারিক দৈন্য সে নিজের পক্ষে অপমানকর বলিয়াই মনে করিত। মহেক্স এটুকু বুঝিয়াছিল যে, মহেঞ্জের ঘরের অজস্র সচ্ছলতা, বিলাস-উপকরণ এবং সাধারণের কাছে ধনী বলিয়া তাহীদের গৌরব, এক কালে বিনোদিনীর মনকে আকর্ষণ করিয়াছিল। সে অনায়াসেই এই ধনসম্পদ, এই-সকল আরাম ও গৌরবের ঈশ্বরী হইতে পারিত, সেই কল্পনায় তাহার মনকে একান্ত উত্তেজিত করিয়া তুলিয়াছিল। আজ যখন মহেন্দ্রের উপর প্রভুত্বলাভ করিবার সময় হইল, না চাহিয়াও সে যখন মহেন্দ্রের সমস্ত ধনসম্পদ নিজের ভোগে আনিতে পারে, তখন কেন সে এমন অসহ উপেক্ষার সহিত একান্ত উদ্ধতভাবে কষ্টকর লজ্জাকর দীনতা স্বীকার করিয়া লইতেছে । মহেন্দ্রের প্রতি নিজের নির্ভরকে সে যথাসম্ভব সংকুচিত করিয়া রাথিতে চায়। যে উন্মত্ত মহেন্দ্র বিনোদিনীকে তাহার স্বাভাবিক আশ্রয় হইতে চিরজীবনের জন্য চু্যত করিয়াছে, সেই মহেঞ্জের হাত হইতে সে এমন কিছুই চাহে না, যাহা তাহার এই সর্বনাশের মূল্যস্বরূপ গণ্য হইতে, পারে । মহেন্দ্রের ঘরে যখন বিনোদিনী ছিল, তখন তাহার আচরণে বৈধব্যব্রতের কাঠিন্য বড়ো একটা ছিল না, কিন্তু এতদিন পরে সে আপনাকে সর্বপ্রকার ভোগ হইতে বঞ্চিত করিয়াছে। এখন সে একবেলা খায়, মোটা কাপড় পরে, তাহার সেই অনর্গল-উৎসারিত হাস্তপরিহাসই বা গেল কোথায় । এখন সে এমন স্তব্ধ, এমন আবৃত, এমন স্থদুর, এমন ভীষণ হইয়া উঠিয়াছে যে, মহেন্দ্র তাহাকে সামান্ত একটা কথাও জোর করিয়া বলিতে সাহস পায় না। মহেন্দ্র আশ্চর্ষ হইয়া, সুধীর হইয়া, ক্রুদ্ধ হইয়া কেবলই ভাবিতে লাগিল, “বিনোদিনী আমাকে এত চেষ্টায় দুর্লভ ফলের মতো এত উচ্চশাখা হইতে পাড়িয়া লইল, তাহার পরে ভ্রাণমাত্র না করিয়া আজ মাটিতে ফেলিয়া দিতেছে কেন।” মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “কোথাকার টিকিট করিব বলে ।” বিনোদিনী কহিল, “পশ্চিম দিকে যেখানে খুশি চলো— কাল সকালে যেখানে গাড়ি থামিবে, নামিয়া পড়িব ।” جریان এমনতরো ভ্রমণ মহেন্দ্রের কাছে লোভনীয় নহে । আরামের ব্যাঘাত তাহার পক্ষে কষ্টকর। বড়ো শহরে গিয়া ভালোরূপ আশ্রয় না পাইলে মহেক্সের বড়ো মুশকিল। সে খুজিয়া-পাতিয়া করিয়া-কর্মিয়া লইবার লোক নহে। তাই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ-বিরক্ত মনে মহেন্দ্র গাড়িতে উঠিল । এদিকে মনে কেবলই ভয় হইতে লাগিল, পাছে বিনোদিনী তাহাকে না জানাইয়াই কোথাও নামিয়া পড়ে । 醬
