পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ፃe রবীন্দ্র-রচনাবলী যে সময়ে জাগিলে আত্মরক্ষা করিতে পারিতাম সে সময়ে জাগি নাই, যে সময়ে ডুবিয়াছি তখন চৈতন্ত হইয়াছে। সমূত্রে পড়িলে লোকে যে ভাবে কাষ্ঠখণ্ড অবলম্বন করে আমি বালক ধ্রুবকে সেইভাবে অবলম্বন করিয়াছি । আমি গ্রুবের মধ্যে আত্মসমাধান করিয়া ধ্রুবের মধ্যে পুনর্জন্ম লাভ করিব। আমি .প্রথম হইতে ধ্রুবকে মানুষ করিয়া গড়িয়া তুলিব । ধ্রুবের সহিত তিলে তিলে আমিই বাড়িতে থাকিব । আমার মানবজন্ম সম্পূর্ণ করিব। ঠাকুর, আমি মানুষের মতো নই আমি রাজা হইয়া কী করিব।” 聯 শেষ কথাটা রাজা অত্যস্ত আবেগের সহিত উচ্চারণ করিলেন—শুনিয়া ধ্রুব রাজার হাটুর উপর তাহার মাথা ঘষিয়া ঘষিয়া কহিল, “আমি আজ ।” বিম্বন হাসিয়া ধ্রুবকে কোলে তুলিয়া লইলেন । অনেক ক্ষণ তাহার মুখের দিকে চাহিয়া অবশেষে রাজাকে কহিলেন, “বনে কি কখনো মানুষ গড়া যায় । বনে কেবল একটা উদ্ভিদ পালন করিয়া তোলা যাইতে পারে। মানুষ মচুন্যসমাজেই গঠিত হয়।” রাজা কহিলেন, “আমি নিতান্তই বনবাসী হইব না, মনুষ্যসমাজ হইতে কিঞ্চিং দূরে থাকিব মাত্র, অথচ সমাজের সহিত সমস্ত যোগ বিচ্ছিন্ন করিব না। এ কেবল দিন কতকের জন্ত ।” এদিকে নক্ষত্র রায় সৈন্তসমেত রাজধানীর নিকটবর্তী হইলেন। প্রজাদের ধনধান্ত লুষ্ঠিত হইতে লাগিল। প্রজারা কেবল গোবিন্দমাণিক্যকেই অভিশাপ দিতে লাগিল । তাহারা কহিল, “এ সমস্তই কেবল রাজার পাপে ঘটিতেছে।” রাজা এক বার রঘুপতির সহিত সাক্ষাৎ করিতে চাহিলেন। রঘুপতি উপস্থিত হইলে তাহাকে কহিলেন, “আর কেন প্রজাদিগকে কষ্ট দিতেছ। আমি নক্ষত্ৰ রায়কে রাজ্য ছাড়িয়া দিয়া চলিয়া যাইতেছি । তোমার মোগল-সৈন্তদের বিদায় করিয়া দাও।” রঘুপতি কহিলেন, “যে আজ্ঞা, আপনি বিদায় হইলেই আমি মোগল-সৈন্যদের বিদায় করিয়া দিব-ত্রিপুরা লুষ্ঠিত হয় ইহা আমার ইচ্ছা নহে।” রাজা সেই দিনই রাজ্য ছাড়িয়া যাত্রার উদ্যোগ করিলেন, তাহার রাজৰেশ ত্যাগ করিলেন, গেরুয়া বসন পরিলেন । নক্ষত্র রায়কে রাজার সমস্ত কর্তব্য স্মরণ করাইয়া এক দীর্ঘ আশীৰ্বাদ-পত্র লিখিলেন । 腳 鬱 অবশেষে রাজা ধ্রুবকে কোলে তুলিয়া বলিলেন, "ধ্ৰুৰ, জামার সঙ্গে বনে যাবে বাছা।”