পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢w२ রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রতি আসক্তি না রাখিয়া কৰ্ম করিবে । ভিক্ষার অগৌরব এই যে, ফললাভ হইলেও নিজের শক্তি নিজে খাটাইবার যে সার্থকতা, তাহা হইতে বঞ্চিত হইতে হয় । যাহা হউক, ইহা দেখা যাইতেছে যে, সকল দিক দিয়াই আমরা নিজের স্বাধীন শক্তির গৌরৰ অনুভব করিবার একটা উদ্যম অস্তরের মধ্যে অনুভব করিতেছি— সাহিত্য হইতে আরম্ভ করিয়া পলিটিক্স পর্যন্ত কোথাও ইহার বিচ্ছেদ নাই । ইহার একটা ফল এই দেখিতেছি, পূর্বে ইংরেজি শিক্ষা আমাদের দেশে প্রাচীননবীন, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, উচ্চ নীচ, ছাত্র ও সংসারীর মধ্যে যে একটা বিচ্ছেদের স্থষ্টি করিয়াছিল, এখন তাহার উলটা কাজ আরম্ভ হইয়াছে, এখন আবার আমরা নিজেদের ঐক্যসূত্র সন্ধান করিয়া পরস্পর ঘনিষ্ঠ হইবার চেষ্টা করিতেছি । মধ্যকালের এই বিচ্ছিন্নতাই পরিণামের মিলনকে যথার্থভাবে সম্পূর্ণ করিবে, তাহার সন্দেহ নাই । এই মিলনের আকর্ষণেই আজ বঙ্গভাষা বঙ্গসাহিত্য আমাদের ইংরেজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদিগকেও আপন করিয়াছে। একদিন যেখানে বিপক্ষের দুর্ভেদ্য দুর্গ ছিল সেখান হইতেও বঙ্গের বিজয়িনী বাণী স্বেচ্ছাসমাগত সেবকদের অর্ঘ্যলাভ করিতেছেন । পূর্বে এমন দিন ছিল যখন ইংরেজি পাঠশালা হইতে আমাদের একেবারে ছুটি ছিল না। বাড়ি আসিতাম, সেখানেও পাঠশালা পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিয়া আসিত। বন্ধুকেও সম্ভাষণ করিতাম ইংরেজিতে, পিতাকেও পত্র লিখিতাম ইংরেজিতে, প্রাণের কথা বলিতাম ইংরেজি কাব্যে, দেশের লোককে সভায় আহবান করিতাম ইংরেজি বক্তৃতায় । আজ যখন সেই পাঠশালা হইতে, একেবারে না হউক, ক্ষণে ক্ষণে ছুটি পাইয়া থাকি তখন সেই ছুটির সময়টাতে আনন্দ করিব কোথায় । মাতার অন্তঃপুরে নহে কি । দিনের পড়া তো শেষ হইল, তার পরে ক্রিকেট খেলাতেও না হয় রণজিৎ হইয়া উঠিলাম। তার পরে ? তার পরে গৃহবাতায়ন হইতে মাতার স্বহস্তজালিত সন্ধ্যাদীপটি কি চোখে পড়িবে না। যদি পড়ে, তবে কি অবজ্ঞা করিয়া বলিব, ওটা মাটির প্রদীপ । ওই মাটির প্রদীপের পশ্চাতে কি মাতার গৌরব নাই। যদি মাটির প্রদীপই হয় তো সে দোষ কার। মাতার কক্ষে সোনার প্রদীপ গড়িয়া দিতে কে বাধা দিয়াছে। যেমনই হউক না কেন, মাটিই হউক আর সোনাই হউক, যখন আনন্দের দিন আসিবে তখন ওইখানেই আমাদের উৎসব ; আর যখন দুঃখের অন্ধকার ঘনাইয়া আসে তখন রাজপথে দাড়াইয়া চোখে জল ফেলা যায় না, তখন ওই গৃহ ছাড়া আর গতি নাই । 彈 আজ এখানে আমরা সেই পাঠশালার ফেরত আসিয়াছি । আজ, সাহিত্য