পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ››ግ বিভূতিভূষণ যখন স্নানের পূর্বে রোয়াকে বসিয়া তেল মাখিতেছেন তখন জ্যাঠাইম র্তাহার রজতগিরিনিভ গেীর পুষ্ট দেহটি দেখিয়া মুগ্ধ হইলেন। যজ্ঞেশ্বরকে ডাকিয়৷ কহিলেন, “এই ছেলেটির সঙ্গে আমাদের কমলের বিবাহ হয় না কি।” ভীরু যজ্ঞেশ্বর বিস্ফারিত নেত্ৰে কহিলেন, “সে কি হয় ।” জ্যাঠাইমা কহিলেন, “কেন হইবে না। চেষ্টা করিলেই হয়।” এই বলিয়া তিনি বাথানপাড়ার গোয়ালদের ঘর হইতে ভালো ছানা ও ক্ষীর আনাইয়া বিবিধ আকার ও আয়তনের মোদক -নির্মাণে প্রবৃত্ত হইলেন। স্বানাহারের পর বিভূতিভূষণ সলজে সসংকোচে নিজের বিবাহের প্রস্তাব উত্থাপন করিলেন। যজ্ঞেশ্বর আনন্দে ব্যাকুল হইয়া জ্যাঠাইমাকে সুসংবাদ দিলেন । জ্যাঠাইমা শাস্ত মুখে কহিলেন, “তা বেশ হয়েছে বাপু, কিন্তু তুমি একটু ঠাণ্ড৷ হও ।” তাহার পক্ষে এটা কিছুই আশাতীত হয় নাই। যদি কমলার জন্য এক দিক হইতে কাবুলের আমীর ও অন্ত দিক হইতে চীনের সম্রাট তাহার দ্বারস্থ হইত তিনি আশ্চর্য হইতেন না । ক্ষীণাশ্বাস যজ্ঞেশ্বর বিভূতিভূষণের হাত ধরিয়া বলিতে লাগিলেন, “দেখো বাবা, আমার সকল দিক যেন নষ্ট না হয় ।” বিবাহের প্রস্তাব পাকা করিয়া বিভূতিভূষণ র্তাহার বাপের কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন । গৌরসুন্দর নিজে নিরক্ষর ছিলেন বলিয়া শিক্ষিত ছেলেটিকে মনে মনে বিশেষ খাতির করিতেন । র্তাহার কোনো আচরণে বা মতে পাছে তাহার ছেলের কাছে সুশিক্ষা বা শিষ্টতার অভাব ধরা পড়ে এই সংকোচ তিনি দূর করিতে পারিতেন না। র্তাহার একমাত্র প্রাণাধিক পুত্ৰ যেন বাপকে মনে মনে ধিক্কার না দেয়, যেন অশিক্ষিত বাপের জন্য তাহাকে লজ্জিত না হইতে হয়, এ চেষ্টা তাহার সর্বদা ছিল। কিন্তু তবু যখন শুনিলেন, বিভূতি দরিদ্রকন্যাকে বিবাহ করিতে উদ্যত, তখন প্রথমটা রাগ প্রকাশ করিয়া উঠিলেন। বিভূতি নতশিরে চুপ করিয়া রহিল। তখন গেীরস্থদের কিঞ্চিৎ শাস্ত হইয়া নিজেকে সংশোধন করিয়া লইয়া কহিলেন, “আমি কি পণের লোভে তোমাকে বিবাহ করিতে বলিতেছি । তা মনে করিয়ো না। নিজের ছেলেকে লইয়া বেহাইয়ের সঙ্গে দরদপ্তর করিতে বসিব, আমি তেমন ছোটো লোক নই। কিন্তু বড়ো ঘরের মেয়ে চাই ।” বিভূতিভূষণ বুঝাইয়া দিলেন, যজ্ঞেশ্বর সম্রাস্তবংশীয়, সম্প্রতি গরিব হইয়াছেন।