পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

98 রবীন্দ্র-রচনাবলী م বেণু কহিল, "যেমন করিয়া হোক, বিলাতে গিয়া বারিস্টার হইয়া আনিলে ৯ বিপদ হইতে পরিত্রাণ পাই।” হরলাল কহিল, “অধরবাবু কি যাইতে দিবেন।” বে কহিল, “আমি চলিয়া গেলে তিনি বাচেন । কিন্তু টাকার উপরে যেরকম মায়া, বিলাতের খরচ তাহার কাছ হইতে সহজে আদায় হইবে না। একটু কৌশল করিতে হইবে।” হরলাল বেণুর বিজ্ঞতা দেখিয়া হাসিয়া কহিল, “কী কৌশল ।” বেণু কহিল, “আমি হ্যাগুনোটে টাকা ধার করিব। পাওনাদার আমার নামে নালিশ করিলে বাবা তখন দায়ে পড়িয়া শোধ করিবেন । সেই টাকায় পালাইয়৷ বিলাত যাইব । সেখানে গেলে তিনি খরচ না দিয়া থাকিতে পরিবেন না ।” হরলাল কহিল, “তোমাকে টাকা ধার দিবে কে।” বেণু কহিল, “আপনি পারেন না ?” _ச் হরলাল আশ্চর্য হইয়া কহিল, “আমি !” মুখে আর কোনো কথা বাহির হইল না। বেণু কহিল, “কেন, আপনার দরোয়ান তো তোড়ায় করিয়া অনেক টাকা ঘরে আনিল ।” হরলাল হাসিয়া কহিল, “সে দরোয়ানও যেমন আমার, টাকাও তেমনি ।” বলিয়া এই আপিসের টাকার ব্যবহারটা কী তাহা বেণুকে বুঝাইয়া দিল। এই টাকা কেবল একটি রাত্রের জন্যই দরিদ্রের ঘরে আশ্রয় লয়, প্রভাত হইলে দশ দিকেতে গমন করে । বেণু কহিল, “আপনাদের সাহেব আমাকে ধার দিতে পারেন না ? নাহয় আমি সুদ বেশি করিয়া দিব ।” হরলাল কহিল, “তোমার বাপ যদি সিকিউরিটি দেন তাহা হইলে আমার অনুরোধে হয়তো দিতেও পারেন।” বেণু কহিল, “বাবা যদি সিকিউরিটি দিবেন তো টাকা দিবেন না কেন।” তর্কট। এইখানেই মিটিয়া গেল। হরলাল মনে মনে ভাবিতে লাগিল, “আমার যদি কিছু থাকিত, তবে বাড়িঘর জমিজমা সমস্ত বেচিয়া-কিনিয়া টাকা দিতাম।” কিন্তু একটিমাত্র অসুবিধা এই যে, বাড়িঘর জমিজমা কিছুই নাই ।