ՀԳՀ রবীন্দ্র-রচনাবলী বঙ্কিমের লেখা 'বিষবৃক্ষে, বঙ্কিম তাতে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন,—বঙ্কিমি ফ্যাশান নসিরামের লেখা “মনোমোহনের মোহনবাগানে,” নসিরাম তাতে বঙ্কিমকে দিয়েছে মাটি করে। বারোয়ারি তাবুর কানাতের নিচে ব্যবসাদার নাচওআলীর দশন মেলে, কিন্তু শুভদৃষ্টিকালে বধূর মুখ দেখবার বেলায় বেনারসি ওড়নার ঘোমটা চাই। কানাত इल ফ্যাশানের, আর বেনারসি হল স্টাইলের, বিশেষের মুখ বিশেষ রঙের ছায়ায় দেখবার জন্যে। অমিত বলে, হাটের লোকের পায়ে-চলা রাস্তার বাইরে আমাদের পা সরতে ভরসা পায় না বলেই আমাদের দেশে স্টাইলের এত অনাদর। দক্ষযজ্ঞের গল্পে এই কথাটির পৌরাণিক ব্যাখ্যা মেলে। ইন্দ্রচন্দ্রবরুণ একেবারে স্বগের ফ্যাশান-দুরন্ত দেবতা, যাজ্ঞিকমহলে তাদের নিমন্ত্রণও জুটত। শিবের ছিল স্টাইল, এত ওরিজিন্যাল যে, মন্ত্রপড়া যজমানেরা তাকে হবাকব্য দেওয়াট বে-দস্তুর বলে জানত। অক্সফোর্ডের বি এর মুখে এ-সব কথা শুনতে আমার ভালো লাগে। কেননা, আমার বিশ্বাস, আমার লেখায় স্টাইল আছে—সেইজন্যেই আমার সকল বইয়েরই এক সংস্করণেই কৈবল্যপ্রাপ্তি, তার “ন পুনরাবর্তন্তে ।” আমার শুালক নবকৃষ্ণ অমিতর এ-সব কথা একেবারে সইতে পারত না—বলত, “রেখে দাও তোমার অক্সফোর্ডের পাস ।” সে ছিল ইংরেজি সাহিত্যে রোমহর্ষক এম এ ; তাকে পড়তে হয়েছে বিস্তর, বুঝতে হয়েছে অল্প। সেদিন সে আমাকে বললে, “অমিত কেবলই ছোটো লেখককে বড়ো করে, বড়ো লেখককে খাটো করবার জন্যেই। অবজ্ঞার ঢাক পিটোবার কাজে তার শখ, তোমাকে সে করেছে তার ঢাকের কাঠি ।” দুঃখের বিষয়, এই আলোচনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আমার স্ত্রী, স্বয়ং ওর সহোদরা । কিন্তু পরম সন্তোষের বিষয় এই যে, আমার হালকের কথা তার একটুও ভালো লাগে নি। দেখলুম, অমিতর সঙ্গেই তার রুচির মিল, অথচ পড়াশুনে বেশি করেন নি। স্ত্রীলোকের আশ্চর্য স্বাভাবিক বুদ্ধি । অনেক সময় আমার মনেও খটকা লাগে যখন দেখি, কত কত নামজাদ ইংরেজ লেখকদেরকেও নগণ্য করতে অমিতর বুক দমে না । তার হল, যাদের বলা যেতে পারে, বহুবাজারে চলতি লেখক, বড়োবাজারের ছাপমারা ; প্রশংসা করবার জন্তে যাদের লেখা পড়ে দেখবার দরকারই হয় না, চোখ বুজে গুণগান করলেই পাসমার্ক পাওয়া যায়। অমিতর পক্ষেও এদের লেপা পড়ে দেখা অনাবশ্বক, চোখ বুজে নিন্দে করতে ওর বাধে না । আসলে, যারা নামজাদা তারা ওর কাছে বড়ো বেশি সরকারি, বর্ধমানের ওয়েটিংক্রমের মতো ; আর যাদেরকে ও নিজে আবিষ্কার করেছে তাদের উপর ওর খাসদখল, যেন স্পেশাল ট্রেনের সেলুন কামরা ।