পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক তপোনাথ দত্তসাহেবের কথার উত্তরে বলিল—ত ঠিক । দত্তসাহেব হা হা করিয়া হাসিয়া বলিলেন—ঠিক নয় ? ওদের কিছুতে তবু সয় না। সামনে যে পড়বে, বাধা যে দেবে, তখনই তার মুখ বন্ধ করতে হবে। উদ্দেশু যদি কখনও সিদ্ধ হয়, আদর্শরূপ পায়, এ সব ছোটখাটো ভুলের জন্যে তখন সময়-মত ধীরেন্থন্থে দুঃখ প্রকাশ করলেই চলবে। দত্তসাহেব আর একবার হা হা করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। তপোনাথ বাগানের দিকে চাহিয়া ছিল । চমকিয়া সভয়ে তাহার দিকে চাহিল। দত্তসাহেব আরামের সঙ্গে চুরুটে একটা হালকা টান দিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন–কি বল ? —সে ত নিশ্চয় । আর কি বলা যাইতে পারে ভাবিয়া না-পাইয়া তপোনাথ ইতস্তত: করিতেছে এমন সময় অতুভ আসিয়া একখানা হাতে টান দিয়া বলিল—উঠুন। অনুভ বুঝিয়াছে, সে নিজে গিয়া তপোনাথকে উঠাইয়া না আনিলে তপোনাথের সাধ্য নাই দত্তসাহেবের সামনে হইতে উঠিয়া আসে। জমাট আলোচনায় বাধা পাইয় দত্তসাহেব বিম্মিত ভাবে বলিলেন—কোথায় ? ঘাড় বাকাইয়া অনুভ বলিল-মাটি-খোড়ার লোকের অভাবে আমি কাজ করতে পারছি না, আর উনি দিব্যি এখানে বসে তর্ক করছেন। উঠুন বলছি। দত্তসাহেব ভদ্রসস্তানের দুর্গতিতে বিব্রত হইয়া বলিলেন— আহ, তোমার মালীটা কোথায় গেল ? ঝঙ্কার দিয়া অন্তভা বলিলেন –সে জল তুলবে না ? উঠে আসুন । তপোনাথকে বাগানে টানিয়া লইয়া গিয়া অনুভ বলিল—বাজে তর্ক করতে এত ভালও লাগে আপনার ? মহৎ চিস্তায় কি হয় বলুন ত? ডিসপেপসিয়া ছাড়া সত্যি সত্যি আর কিছু হয় ? তপোনাথ হাসিয়া বলিল-আমার ত এখনও হয় নি। —মাটি না খুড়লে হবে। নিন, গাইতি নিন। অনুভ জোর করিয়া তাহার হাতে গাইতিটা গুজিয়৷ লি। এমন সময় একসঙ্গে দুই জনেরই দৃষ্টি পড়িল, অহেতুক St. তপোনাথের বাগানের বেড়া ধরিয়া সবিত বিবর্ণ মুখে একদুষ্টে তাহাদের দিকে চাহিয়া আছে । তাঁহাদের চোখে চোখ পড়িতেই সরিয়া গেল। অনুভ এখান হইতেই চেচাইয় তাহাকে ডাকিল। কিন্তু সে যে শুনিতে পাইল এমন মনে হইল না । অমৃভা উৎসাহের সঙ্গে বলিল-ওঁকে ডাকুন না ? তপোনাথ হাসিয়া বলিল—ও আসবে না । আছে । ব্যস্ত দুপুরবেলা আহারাদির পর তপোনাথ একবার গড়াইয় লইল । কিন্তু ঘুম আসিল না। সকালে বাড়িতে টেলিগ্রাম করা হইয়াছে ; এতক্ষণ উত্তর আসা উচিত। কেন আসিল না, কে জানে। তাহার মনটা কেমন চঞ্চল হইয়া উঠিল । পাঞ্জাবীটা গায়ে দিয়া কেবল বাহির হইতেছে সবিতা আসিয়া পথরোধ করিয়া দাড়াইল । —দত্তসাহেবের ওখানে যাচ্ছ ? এই দুপুরবেলা ? ---नीं । তপোনাথ পাশ কাটাইয়া চলিয়া যাইবার চেষ্টা করিল, পথ না পাইয়া ফিরিয়া আসিল । । —কোথায় যাচ্ছ তা হ’লে ? --ষ্টেশনে । --সেখান থেকে দত্তসাহেবের বাড়ি ত ? তপোনাথ সবিতার কথার গুঢ়াৰ্থ ঠিক ধরিতে পারিতেছিল না। ঘাড় নাড়িয়া বলিল—যেতে পারি। কেন ? —ওখানে যেতে পাবে না । তাহার আয়ত চোথে আশ্চৰ্য্য মিনতি ! ঠোঁট কঁাপিতেছে। তপোনাথ অবাক । বলিল—তার মানে ? —তার মানে জানি না । সবিতা আর বলিতে পারিল না । দরজার কোণে মুখ লুকাইয়া ফোপাইয় ফোপাইয়া কাদিতে লাগিল । ধীরে ধীরে সকল ব্যাপার তপোনাথের কাছে স্পষ্ট হইল । কেন দত্তসাহেবের বাড়ি যাওয়ায় আপত্তি, কোথায় তাহার ভয় বুঝিম এক মুহূৰ্ত্তে তাহার মন সবিতার প্রতি বিতৃষ্ণায় বিরূপ হইয়া উঠিল। রূঢ় কণ্ঠে কহিল—ছি সবিত, তোমার মন এত নীচু!