পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

332 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় দাবানল ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ অসুর নিধন উৎসব ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা সম্পাদকীয় অসুর নিধন উৎসব ংলার ঘরে ঘরে শারদীয় উৎসবের বাঁশী উঠেছে। এই আনন্দের আহবান বাঙালী মাত্রের মনই সাড়া না দিয়ে পারে না। এই উৎসবের সঙ্গে সমগ্র বাঙালী জাতির নাড়ীর টান অত্যন্ত নিবিড় এবং গভীর। একদিন সমাজবিবর্তনের ধারা স্রোতে এই উৎসবের আঙ্গিক হয়ত পাল্টাবে। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত প্রীতির বাণী একভাবে না একভাবে বাঙালী চিত্ত সঞ্জীবিত করে রাখবে। এবার বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিস্তৃত অংশ দেশের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন; ইয়াহিয়া সরকারের নেকড়ে বাহিনী তাদেরকে ভিটেমাটি থেকে, প্ৰিয মাতৃভূমির থেকে, জীবনের নাট্যমঞ্চ থেকে প্রচণ্ডতম পাশবিক শক্তি পয়োগ করে দেশের বাইরে ছুড়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জাগিয়ে তুলেছে তার স্বাভাবিক পরিণতি স্বরুপ সংখালঘু সম্প্রদায়কে এক খাট্টা হয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছে। তাদের বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ-অতীতের রক্তাক্ত স্মৃতি বড় করুন এবং বেদনাদায়ক। এক মাত্র উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নই তাঁদের বাঁচিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এই সংবাদ শুনার জন্য শরণার্থী শিবিরের হাজার হাজার শ্রবণ উৎকর্ণ হয়ে রয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণতরঙ্গমুখর এই উত্তোরণ মুহুর্তের দেবীর বোধন গীতি ভেসে উঠেছে। এইবার পূজা আর পুষ্পে নয়, বিল্ব পত্রে নয়, দুর্বাদলে নয়, এবার রক্তে রক্তে মাংসে মাংসে মগজে মজ্জায় দেবীর আবাহন গীতি বেজে উঠেছে, এই সুর নতুন, এই প্রাণস্পন্দন অভিনব, এই আত্মত্যাগ অভূতপূর্ব। এবার শারদীয় উৎসব শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে নয়, বাঙালী জাতির অন্তর্গত প্রতিটি সম্প্রদায়ের কাছেই নতুন তাৎপর্যে ধরা দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সামন্তবাদের বিরুদ্ধে শোষণ পুঁজিবাদ-এর সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এক ক্ষমাহীন সংগ্রাম, এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বাঙালী জাতি সাধীন হবে। বাংলাদেশে তারা সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িক কলুষমুক্ত একটি সুন্দর সমাজ সৃজন করবেন। এই সময়ে এই মহান ঐতিহ্যময়ী উৎসব উপলক্ষে আমরা একটি কথা স্পষ্ট ভাবে জানাতে চাই- তা হলো শারদীয় উৎসব বাংলাদেশের সমাজের একাংশের ধর্মীয় উৎসব হলেও গোটা বাঙালী জাতির ঐতিহ্যের সঙ্গে এর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, বিশেষ করে বাংলার শিল্প-সংস্কৃতিতে সাহিত্য সৃজনলোকে এই উৎসবের অবদান অনেক বেশি। আমরা বলতে চাই যারা ধর্মীয়ভাবে নিজেদের ভক্তিপিপাসা এই উৎসবের মাধ্যমে মেটাতে চান-তারা সেভাবেই এই উৎসবকে বরণ করে নিন। যাদের ধর্মীয় উৎসব নয়, তারাও এই উৎসবের কটি দিন জাতির কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং শিল্পচর্চারদিন হিসেবে গ্রহণ করুন। বাংলাদেশের যে মহান জাতি গঠনে দীপ্ত সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাতে করে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি আকড়ে ধরে থাকলে চলবে না। একটি প্রাণবন্ত জাতি গঠনের এই দ্রুত শক্তিশালী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এক সম্প্রদায়কে গ্রহন করতে হবে। তা যত তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল। জাতির মাত্র কঠিন অগ্নিপরীক্ষার দিনে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে প্রতিটি সংগ্রামী বাঙালীর কাছে আমার এই

  • দানাবলঃ সাপ্তাহিক। মুক্তিযোদ্ধা ও সংগ্রামী জনতার মুখপত্র। সম্পাদকঃ মোঃ জিনাত আলী। মুজিবনগর হতে ত্রিবর্ণ প্রকাশনীর পক্ষে মোঃ সেলিম কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত।