পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্ৰৌপদী VS মনুষ্যচরিত্র-সাগরের তল পৰ্য্যন্ত নখদৰ্পণবৎ দেখিতে পাইতেন। যখন কৰ্ণ দ্রৌপদীকে বেশ্য বলিল, দুঃশাসন তাহার পরিধেয় আকর্ষণ করিতে গেল, তখন আর দর্প রহিল নাভয়াধিক্যে হৃদয় দ্রবীভূত হইল। তখন দ্রৌপদী ডাকিতে লাগিলেন, “হা নাথ! হা রমানাথ! হা ব্ৰজনাথ ! হা দুঃখনাশ ! আমি কৌরবসাগরে নিমগ্ন হইয়াছি-আমাকে উদ্ধার করা !” এ স্থলে কবিত্বের চরমোৎকর্ষ। দ্রৌপদী স্ত্রীজাতি বলিয়া তাহার হৃদয়ে দৰ্প প্ৰবল, কিন্তু তঁাহার ধৰ্ম্মজ্ঞানও অসামান্যযখন তিনি দপিতা রাজমহিষী হইয়া না দাঁড়ান, তখন জনমণ্ডলে তাদৃশী ধৰ্ম্মানুরাগিণী আছে বোধ হয় না । এই প্ৰবল ধৰ্ম্মানুরাগই, প্ৰবলতর দৰ্পের মানদণ্ডের স্বরূপ । এই অসামান্য ধৰ্ম্মানুরাগ, এবং তেজস্বিতার সহিত সেই ধৰ্ম্মানুরাগের রমণীয় সামঞ্জস্য, ধৃতরাষ্ট্রের নিকট র্তাহার বরগ্ৰহণ কালে অতি সুন্দরীরূপে পরিস্ফুট হইয়াছে। সে স্থানটি এত সুন্দর যে, যিনি তাহ শত বার পাঠ করিয়াছেন, তিনি তাহা আর একবার পাঠ করিলেও অসুখী হইবেন না। এ জন্য সেই স্থানটি আমরা উদ্ধত করিলাম। “হিতৈষী রাজা ধৃতরাষ্ট্র দুৰ্য্যোধনকে এইরূপ তিরস্কার করিয়া সান্তনাবাক্যে দ্ৰৌপদীকে কহিলেন, হে দ্রুপদতনয়ে! তুমি আমার নিকট স্বীয় অভিলষিত বর প্রার্থনা কর, তুমি আমার সমুদায় বধূগণ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ । “দ্রৌপদী কহিলেন, হে ভরতিকুলপ্ৰদীপ ! যদি প্ৰসন্ন হইয়া থাকেন, তবে এই বর প্রদান করুন যে, সৰ্ব্বধৰ্ম্মযুক্ত শ্ৰীমান যুধিষ্ঠির দাসত্ব হইতে মুক্ত হউন। আপনার পুত্ৰগণ যেন ঐ মনস্বীকে পুনরায় দাস না বলে, আর আমার পুত্র প্রতিবিন্ধ্য যেন দাসপুত্র না হয় ; কেন না, প্রতিবিন্ধ্য রাজপুত্র, বিশেষতঃ ভূপতিগণকৰ্ত্তক লালিত, উহার দাসপুত্ৰতা হওয়া নিতান্ত অবিধেয়। ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, হে কল্যাণি ! আমি তোমার অভিলাষানুরূপ এই বর প্রদান করিলাম ; এক্ষণে তোমাকে আর এক বর প্রদান করিতে ইচ্ছা করি ; তুমি একমাত্র বরের উপযুক্ত নহ। “দ্রৌপদী কহিলেন, হে মহারাজ ! সরথ সশরাসন ভীম, ধনঞ্জয়, নকুল ও সহদেবের দাসত্ব মোচন হউক। ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, হে নন্দিনি ! আমি তোমার প্রার্থনানুরূপ বর প্ৰদান করিলাম ; এক্ষণে তৃতীয় বর প্রার্থনা কর । এই দুই বর দান , দ্বারা তোমার যথার্থ সৎকার করা হয় নাই, তুমি ধৰ্ম্মচারিণী, আমায় সমুদায় পুত্রবধূগণ অপেক্ষা (sछे। “দ্রৌপদী কহিলেন, হে ভগবান! লোভ ধৰ্ম্মনাশের হেতু, অতএব আমি আর বর প্রার্থনা করি না। আমি তৃতীয় বর লইবার উপযুক্ত নাহি ; যেহেতু, বৈশ্যের এক বর, ক্ষত্রিয়পত্নীর দুই বর, রাজার তিন বর ও ব্ৰাহ্মণের শত বর লওয়া কৰ্ত্তব্য। এক্ষণে আমার