কিন্তু আপনি সত্যভঙ্গ না করিলে আমরা কিছুতেই যুদ্ধঘোষণা করিব না। এই মাত্র সংবাদ পাইলাম যে, ফরাসিরা পলায়ন করিয়া আপনার নিকট উপনীত হইয়াছে এবং আপনার সেনাদলে নিযুক্ত হইবার জন্য আবেদন করিয়াছে। আপনি তাহাতে সম্মত হইলে আমাদের সঙ্গে আর বন্ধুভাব থাকিবে না। আপনি সে দিনও আমাদের নিকট সেনা সাহায্য চাহিয়াছিলেন, তাহার পরেই লিখিয়াছেন যে আর চাহেন না; ইহাতে বুঝিতেছি যে ফরাসির সঙ্গে মিত্রতা সংস্থাপন করাই বোধ হয় আপনার অভিমত!’[১]
আলিনগরের সন্ধির পরিণাম যে এরূপ শোচনীয় হইবে, তাহা সিরাজদ্দৌলা স্বপ্নেও অনুমান করেন নাই। ক্রমে ইংরাজের গূঢ়নীতির মর্ম্মালোচনা করিয়া সিরাজদ্দৌলা অবসন্ন হইয়া পড়িতে লাগিলেন।[২] তিনি আর ওয়াট সনের পত্রের কোনরূপ প্রত্যুত্তর প্রদান করিলেন না; কেবল নীরবে সতর্ক দৃষ্টিতে ইংরাজের সংকল্পনুসন্ধানে নিযুক্ত হইলেন।
মহানগরীর রাজপথে ভ্রমণ করিবার সময়ে সুচতুর দস্যুতস্কর হাতের উপর হইতে টাকা ছিনাইয়া লইয়া পলায়ন করিলে পথিক যেমন “চোর চোর” বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠে, তস্করও তদ্রুপ “চোর চোর” বলিয়া কোলাহল করিতে থাকে। সেই জন্য কে সাধু কে চোর তাহার মীমাংসা করা সহজ হয় না। সিরাজদ্দৌলার অবস্থাও সেইরূপ হইল;—আলিনগরের সন্ধিভঙ্গ হইল, কিন্তু কাহার দোষে সন্ধিভঙ্গ হইল, সে কথার মীমাংসা হইতে পারিল না!