শরৎচন্দ্র বসুকে লিখিত
....বাবার ধারণা আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন সিভিল সার্ভিস চাকুরিয়ার পক্ষে নূতন শাসন ব্যবস্থায় জীবন মোটেই দুর্বিষহ হইবে না। দশ বৎসরের মধ্যে এদেশে স্বায়ত্তশাসন অনিবার্য্য। কিন্তু আমার জীবন নূতন শাসন ব্যবস্থায় সহনীয় হইবে কিনা ইহা আমার প্রশ্ন নহে। পরন্তু আমার ধারণা যে চাকুরিতে বহাল থাকিয়াও আমি দেশের কিছু মঙ্গল সাধন করিতে পারি। আমার প্রধান প্রশ্ন নীতিগত। বর্ত্তমান অবস্থায় কি আমাদের এক বিদেশী আমলাতন্ত্রের বশ্যতা স্বীকার করিয়া এক কাঁড়ি টাকার জন্য আত্মবিক্রয় করা সমীচীন? যাহারা ইতিমধ্যেই চাকুরিতে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে বা চাকুরি গ্রহণ করা ভিন্ন যাহাদের গত্যন্তর নাই তাহাদের কথা স্বতন্ত্র। কিন্তু আমার অবস্থা অনেক দিক দিয়া সুবিধাজনক থাকিতে আমার কি এত শীঘ্র বশ্যতা স্বীকার করা উচিত? যেদিন আমি চাকুরির প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করিব সেদিন হইতে আমি আর স্বাধীন মানুষ থাকিব না ইহাই আমার বিশ্বাস।
যদি আমরা উপযুক্ত মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকি তবে দশ বৎসরে কেন তাহার পূর্ব্বেই স্বায়ত্তশাসন আমরা অর্জ্জন করিতে পারি। সেই মূল্য আত্মত্যাগ এবং ক্লেশ স্বীকার। কেবল এই আত্মত্যাগ এবং দুঃখ বরণের ভিত্তিতেই জাতীয় সৌধ প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে। যদি আমরা সকলে নিজের নিজের চাকুরির খুঁটি আঁকড়াইয়া বসিয়া থাকি, নিজের স্বার্থের অন্বেষণেই প্রবৃত্ত থাকি, তবে পঞ্চাশ বৎসরেও আমাদের স্বায়ত্তশাসন মিলিবে না। প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব যদি না হয়, অন্ততঃ প্রত্যেক পরিবারকে আজ দেশমাতার চরণে অর্ঘ্য আনিয়া দিতে হইবে। বাবা আমাকে এই আত্মত্যাগ হইতে রক্ষা
১১২