এই চাকুরিতে যোগ দিতে হয় তবে এ পরীক্ষার জন্য পড়াশুনা করিতে যেরূপ অনিচ্ছা লইয়া বসিয়াছিলাম সেরূপ অনিচ্ছার সঙ্গেই তাহা করিতে হইবে।
চাকুরি জীবনে মোটা মাহিনা এবং তাহার পর মোটা পেন্সন্ আমার বরাদ্দ থাকিবে তাহা জানি। দাসত্বে যদি যথেষ্ট কুশলতা অর্জ্জন করি তাহা হইলে একদিন কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত হইবার আশা আছে। যোগ্যতা থাকিলে, গোলামিতে সুপ্রতিষ্ঠিত হইলে হয়ত, কোন প্রদেশ সরকারের চীফ্ সেক্রেটারী হওয়া অসম্ভব নহে। কিন্তু চাকুরিকেই কি আমার জীবনের শেষ লক্ষ্য বলিয়া মানিয়া লইতে হইবে? চাকুরিতে সাংসারিক সুখ পাওয়া যাইবে, কিন্তু সেটা কি আত্মার মূল্য দিয়াই ক্রয় করিব? আমার মনে হয় আই. সি. এস. গোষ্ঠীর কোন লোককে চাকুরির আইন-কানুনকে যে ভাবে মাথা নিচু করিয়া মানিয়া লইতে হয় তাহার সঙ্গে জীবনের উচ্চ আদর্শকে মানাইয়া লইবার চেষ্টা ভণ্ডামি ভিন্ন কিছু নয়।
সাধারণ লোকের কথায় যাহাকে বলে জীবনে উন্নতি করা তাহার তোরণে দাঁড়াইয়া আমার মনের অবস্থা কী হইয়াছে তাহা আপনি নিশ্চয় বোঝেন। এ চাকুরির স্বপক্ষে বলিবার অনেক কিছু আছে। প্রত্যহ অগণ্য লোকে যে অন্নের চিন্তায় হাবুডুবু খাইতেছে সেই অন্নচিন্তা ইহাতে চিরকালের জন্য মিটিয়া যাইবে। জীবনের সম্মুখে দাঁড়াইয়া সাফল্য অসাফল্য সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নাই, সংশয় নাই। কিন্তু আমার মত মনোবৃত্তির লোক যে চিরকাল “উদ্ভট” জিনিসেরই পূজা করিয়া আসিয়াছে তাহার পক্ষে স্রোতে গা ভাসাইয়া নিশ্চিন্ত হওয়াটাই শ্রেষ্ঠ পথ নহে। সংগ্রাম ভিন্ন বিপদ ভিন্ন জীবনের স্বাদই অনেকখানি অন্তর্হিত হইয়া যায়। যাহার অন্তরের মধ্যে সাংসারিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দংশন নাই তাহার নিকট জীবনের সংশয়, বিপদ ততটা ভয়াবহ নহে। উপরন্তু, একথা ঠিক যে সিভিল সার্ভিসের শৃঙ্খলের মধ্যে আবদ্ধ থাকিয়া
৯৬