পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচারিত [২য় পরিঃ গেলাম, “এ কি পাখী ?” নিমগ্ন চিত্তে তাহার প্রত্যেক গতিবিধি লক্ষ্য করিতে লাগিলাম। ওদিকে পোলবন্দী সাহেবের হাতী আসিতেছে। মাহুত চেচাইতেছে, পাড়ার লোকেরা c “ওরে অমুকের ছেলে, ম’লি ম’লি, পালা পালা” বলিয়া চেচাইতেছে। আমার সেদিকে খেয়াল নাই ; কানে একটা আওয়াজ আসিতেছে মাত্র, কিন্তু সম্পূর্ণ চেতনা হইতেছে না। এমন সময় হঠাৎ দেখি হাতী, শুড় দিয়া আমাকে ধরিবার চেষ্টা করিতেছে। মাহুত বোধ হয় আমাকে সরাইয়া দিতে ইঙ্গিত করিতেছে। হাতীর শুড় দেখিয়াই ভয়ে চীৎকার করিয়া সরিয়া গেলাম । কারণানুসন্ধিৎসা।—আমি যে কিছু দেখিলেই এত মনোযোগী হইতাম, তাহার কারণ বোধ হয়। এই যে, শৈশব হইতেই আমার , কারণানুসন্ধিৎসা বড় প্রবল ছিল। মায়ের মুখে শুনিয়াছি যে, আমি দাড়াইতে ও কথা কহিতে শিখিলেই সকল বিষয়ে “কেন’, ‘কেন’ বলিয়া তাহাকে অস্থির করিয়া তুলিতাম। যথা, তাহার কোলে চড়িয়া আর এক পাড়ায় নিমন্ত্রণে যাইতেছি, হঠাৎ পথে একটি নূতন গরু দেখিলাম। অমনি প্রশ্ন-ও কাদের গরু ? উত্তর-পুটেদের গরু। প্রশ্ন—এখানে কেন রেখে গেছে ? উত্তর-ঘাস খাবে ব’লে। প্রশ্ন—কোন ঘাস খাবে ? উত্তর-ক্ষিদে পেয়েছে ব’লে। প্রশ্ন-কেন ক্ষিদে পেয়েছে ? উত্তর-সমস্ত রাত কিছু খায়নি ব’লে। প্রশ্ন—কেন খায় নি ? উত্তর-ওরা রাত্রে গরুকে জাবনা দেয় না ব’লে। প্রশ্ন—কেন রাত্রে জাবনা দেয় না ? উত্তর-ওরা গরীব ব’লে। প্রশ্ন—গরীব কাকে বলে ? ইত্যাদি। সময়ে সময়ে এই “কেন’র মাত্রা এত অধিক হইত যে উত্তরের পরিবর্তে চপেটাঘাত পাইতাম। এই কারণানুসন্ধান-প্রবৃত্তি হইতেই বোধ হয়, পীপড়া ও পাখীর গতিবিধি এত লক্ষ্য করিতাম। বিড়াল ছানা পোষা।—কেবল যে পাখী ভালবাসিতাম। তাহা নহে, অন্যান্য জন্তুও পুষিতাম। বিড়ালছানা আনিয়া উন্মুদিনীকে দিতাম, সে পুষিত। অনেক সময়ে আমাদের উভয়ের অতিরিক্ত প্রেমবশতঃ তাহদের ।