পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
 পুরাতনী
২৬

কেমনে ছাড়িব তারে সদা প্রাণ চাহে যারে
 কেমনে সহিব বল বিচ্ছেদ দহন।
শরীর যদিও যাবে— মন সদা হেথা রবে
 যার ধন তারই কাছে রবে অনুক্ষণ।
দিবস ফুরায় যত, ছায়া যায় দূরে তত
 কভু না ছাড়ায় তবু পাদপবন্ধন।

 তাঁর গান লেখার খুব অভ্যাস ছিল, ব্রহ্মসঙ্গীত অনেক রচনা করেছিলেন।

 ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের দিকে ওঁর খুব ঝোঁক ছিল, এবং বোধ হয় সেইটেই জীবনের ব্রত করবার ইচ্ছে করেছিলেন। মনে আছে একবার বলেছিলেন—আমি যখন প্রচার করতে বেরব তখন ত রাত জাগতে হবে, বৃষ্টিতে ভিজতে হবে। অবশ্য বিলেত যাওয়াতে সে সাধ পূর্ণ হল না। কিন্তু সেখান থেকেও ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করে পাঠাতেন; এক একটা নতুন গান পেয়ে মহর্ষি খুব সন্তুষ্ট হতেন।

 আমাদের বাড়িতে তখন রোজ উপাসনা হত, রোজ সকালে আমাদের তৈরি হবার জন্য আধঘণ্টা আগে ঘণ্টা পড়ত। তার আগে আমরা কিছু খেতুম না। দ্বিতীয় ঘণ্টা পড়লে দালানে নেবে যেতুম। মহর্ষি থাকলে তিনিই উপাসনা করতেন, তখন মাও গিয়ে বসতেন। না হয়ত বড়ঠাকুর কিম্বা উনি বসতেন। মেয়েরা একদিকে বসতুম পুরুষেরা আর একদিকে। উপাসনার পর খেতুম লুচি তরকারি দুধ ইত্যাদি। চায়ের রেওয়াজ তখন বড় একটা ছিল না। তারপর নাইতে যেতুম। একতলায় একটা ঘরে বড় একটা চৌবাচ্চা ছিল, সেখানে আমরা সবাই একসঙ্গে আমোদ করে নাইতুম। এ ওর গায়ে জল দিচ্ছে, কেউ সর ময়দা মাখছে, কেউ মাখাচ্ছে। আমার সেজননদ নানারকম মাখতেন বলে ওঁর স্নান সব শেষে সারা হত। তিনি ওই চৌবাচ্চাতেই সাঁতার দিতে শিখেছিলেন। মোটা ছিলেন বলে সহজেই ভাসতে পারতেন। আমার আর শেষ পর্যন্ত সাঁতার শেখা হল না।