পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উঠতে পারে। বিজয়ার সম্বন্ধে ডাক্তারের মুখের এই কথাটা তিনি যেন অবিশ্বাস না করেন। বলিয়াই সে মুখ ফিরাইয়া একটু দ্রুতগতিতেই প্রস্থান করিল।

স্নান নাই, আহার নাই, মাথার উপর কড়া রৌদ্র—মাঠের উপর দিয়া নরেন্দ্র দিঘ্‌ড়ায় চলিয়াছিল। কিন্তু কিছুই তাহার ভাল লাগিতেছিল না। তাই চলিতে চলিতে আপনাকে আপনি সে বারংবার প্রশ্ন করিতেছিল, তাহার কিসের গরজ? কে একটা স্ত্রীলোক তাহার শ্রদ্ধার পাত্রকে দেখিবার জন্য অনুরোধ করিয়াছে বলিয়াই সে যাহাকে কখনো চোখেও দেখে নাই তাহাকে দেখিবার জন্য এই রৌদ্রের মধ্যে মাঠ ভাঙ্গিতেছে! এই অন্যায় অনুরোধ করিবার যে তাহার একবিন্দু অধিকার ছিল না তাহা মনে করিয়া তাহার সর্বাঙ্গ জ্বলিতে লাগিল, এবং ইহা রক্ষা করিতে যাওয়াও নিজের সম্মানের হানিকর ইহাও সে বার বার করিয়া আপনাকে বলিতে লাগিল, অথচ মুখ ফিরিয়া চলিয়া যাইতেও পারিল না। এক-পা এক-পা করিয়া সেই দিঘ্‌ড়ার দিকেই অগ্রসর হইতে লাগিল, এবং অনতিকাল পরে সেই নিতান্ত স্পর্ধিত অনুরোধটাকেই বজায় রাখিতে নিজের বাটীর দ্বারদেশে আসিয়া উপস্থিত হইল।

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

এক টুকরা কাগজের উপর নরেন নিজের নামের সঙ্গে তাহার বিলাতী ডাক্তারী খেতাবটা জুড়িয়া দিয়া ভিতরে পাঠাইয়া দিয়াছিল। সেইটা পাঠ করিয়া দয়াল অত্যন্ত সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিলেন। এতবড় একটা ডাক্তার পায়ে হাঁটিয়া তাহাকে দেখিতে আসিয়াছে ইহা তাঁহার নিজেরই যেন একটা অশোভন স্পর্ধা ও অপরাধের মত ঠেকিল এবং ইহাকেই বঞ্চিত করিয়া নিজে এই বাটীতে বাস করিতেছেন এই লজ্জায় কি করিয়া যে মুখ দেখাইবেন ভাবিয়া পাইলেন না। ক্ষণেক পরে একজন গৌরবর্ণ, দীর্ঘকায়, ছিপছিপে যুবক যখন তাঁহার ঘরে আসিয়া ঢুকিল তখন মুগ্ধনেত্রে অবাক হইয়া চাহিয়া রহিলেন। তাঁহার মনে হইল, ব্যাধি তাঁহার যাই হোক, এবং যত বড়ই হোক, আর ভয় নাই—এ যাত্রা তিনি বাঁচিয়া গেলেন। বস্তুতঃ রোগ অতি সামান্য, চিন্তার কিছুমাত্র হেতু নাই আশ্বাস পাইয়া তিনি উঠিয়া বসিলেন, এমন কি ডাক্তারসাহেবকে ট্রেনে তুলিয়া দিতে স্টেশন পর্যন্ত সঙ্গে যাওয়া সম্ভব হইবে কিনা ভাবিতে লাগিলেন ।