পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bo রবীন্দ্র-রচনাবলী হিন্দীসাহিত্য সম্বন্ধে বিশেষ কিছুই জানি না। কিন্তু, এ কথা বলিতে পারি, হিন্দীতে যে-সকল ধ্রুপদ খেয়াল প্রভৃতি পদ শুনা যায় তাহার অধিকাংশই কেবলমাত্র গান, একেবারেই কাব্য নহে। কথাকে সামান্য উপলক্ষমাত্র করিয়া সুর শুনানোই হিন্দী গানের প্রধান উদ্দেশ্য, কিন্তু বাংলায় সুরের সাহায্য লইয়া কথার তবে শ্রোতাদিগকে মুগ্ধ করাই কবির উদ্দেশ্য। কবির গান, কীর্তন, রামপ্রসাদী গান, বাউলের গান প্রভৃতি দেখিলেই ইহার প্রমাণ হইবে । অতএব কাব্যরচনাই বাংলাগানের মুখ্য উদ্দেশ্য, সুরসংযোগ গীেশ । এই সকল কারণে বাংলা সাহিত্য-ভাণ্ডারে রত্ন যাহা কিছু পাওয়া যায় তাহা গান । 2KI Y SA ञ२ी७ ७ छ्न° অনেকদিন হইতেই কবিতা লিখিতেছি, এইজন্য যতই বিনয় করি।-না কেন এটুকু না বলিয়া পারি না যে, ছন্দের তত্ত্ব কিছু কিছু বুঝি। সেই ছন্দের বোধ লইয়া যখন গান লিখিতে বসিলাম, তখন চাদ উঠিলেন। আমার জানা ছিল, ছন্দের মধ্যে যে-নিয়ম আছে তাহা কৃপাতার গড়া নিয়ম, তা কামারের গড়া নিগড় নয় । সুতরাং, তার সংযমে সংকীর্ণ করে না, তাহাতে বৈচিত্র্যাকে উদঘাটিত করিতে থাকে। সেই কথা মনে রাখিয়া বাংলা কাব্যে ছন্দকে বিচিত্র করিতে সংকোচ বোধ করি নাই । কাব্যে ছন্দের যে কাজ, গানে তালের সেই কাজ । অতএব, ছন্দ যে নিয়মে কবিতায় চলে তাল সেই নিয়মে গানে চলিবে এই ভরসা করিয়া গান বাধিতে চাহিলাম । তাহাতে কী উৎপাত ঘটিল একটা দৃষ্টান্ত দিই। মনে করা যাক, আমার গানের কথাটি এই— কঁপিছে দেহলতা থারথার, চোখের জলে আঁখি ভরভর । দোদুল তমালেরি বনছায়া তােমার নীলবাসে নিলাকায়া, বাদল-নিশীথেরি করকার তোমার আঁখি-’পরে ভরভর । যে কথা ছিল তব মনে মনে bRCs Waggi (Krei (KPIsi | নীরব হিয়া তব দিলে ভরি কী মায়া-স্বপনে যে, মারি মরি, নিবিড় কাননের মরমর বাদল-নিশীথের করঝর । এ ছন্দে আমার পাঠকেরা কিছু আপত্তি করিলেন না। তাই সাহস করিয়া ঐটেই ঐ ছন্দেই সুরে গাহিলাম। তখন দেখি, যারা কাব্যের বৈঠকে দিব্য খুশি ছিলেন তারাই গানের বৈঠকে রক্তচক্ষু । তারা বলেন, এ ছন্দের এক অংশে সাত আর-এক অংশে চার, ইহাতে কিছুতেই তাল মেলে না। আমার জবাব এই, তাল যদি না মেলে সেটা তালেরই দোষ, ছন্দটাতে দোষ হয় নাই । কেন তাহা বলি । এই ছন্দ তিন এবং চার মাত্রার যোগে তৈরি । এইজন্যই “তোমার নীলবাসে এই সাত মাত্রার পর 'নিল কায়া” এই চার মাত্রা খাপ খাইল । তিন মাত্রা হইলেও ক্ষতি হইত না । যেমন, “তোমার নীলবাসে ১ সবুজ পত্রে মুদ্রিত ‘সঙ্গীতের মুক্তি” প্রবন্ধের অংশ। মূলানুগত পাঠ । গ্রন্থপরিচয় দ্রষ্টব্য।