পার্ব্বতী চোখ মুছিয়া কহিল, উপায় আর কি? তোমার বরকে তুমি পছন্দ করে বিয়ে করেছিলে?
আমার কথা আলাদা। আমার পছন্দ ছিল না, অপছন্দও হয়নি; তাই আমার কোন কষ্টই ভোগ করতে হয় না। কিন্তু তুমি যে নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মেরেচ বোন!
পার্ব্বতী জবাব দিল না,—ভাবিতে লাগিল।
মনোরমা কি ভাবিয়া ঈষৎ হাসিয়া কহিল, পারু, বরটির বয়স কত?
কার বরটির?
তোর।
পার্ব্বতী একটু হিসাব করিয়া বলিল, বোধ হয় উনিশ।
মনোরমা অতিশয় বিস্মিত হইল; কহিল, সে কি, এই যে শুনলুম প্রায় চল্লিশ!
এবারে পার্ব্বতীও একটু হাসিল; কহিল, মনোদিদি, কত লোকের বয়স চল্লিশ থাকে, আমি কি তার হিসাব রাখি? আমার বরের বয়স উনিশ-কুড়ি এই পর্যন্ত জানি।
মুখপানে চাহিয়া মনোরমা জিজ্ঞাসা করিল, কি নাম রে?
পার্ব্বতী আবার হাসিয়া উঠিল—এতদিনে বুঝি তাও জানো না!
কি করে জানব!
জান না? আচ্ছা বলে দিই। একটু হাসিয়া, একটু গম্ভীর হইয়া পার্ব্বতী তাহার কানের কাছে মুখ আনিয়া বলিল, জানিস নে—শ্রীদেবদাস—
মনোরমা প্রথমে একটু চমকাইয়া উঠিল। পরে ঠেলিয়া দিয়া বলিল, আর ঠাট্টায় কাজ নেই। নাম কি, এই বেলা বল্, আর তো বলতে পাবিনে—
এই ত বললুম।
মনোরমা রাগ করিয়া কহিল, যদি দেবদাস নাম—তবে কান্নাকাটি করে মরচিস কেন?
পার্ব্বতী সহসা মলিন হইয়া গেল। কি যেন একটু ভাবিয়া বলিল, তা বটে। আর তো কান্নাকাটি করব না—
পারু।