ছিঃ— ছিঃ—এখনও কি তুমি ছেলেমানুষ আছ?এখানে, এভাবে আসতে কি তোমার কিছুমাত্র লজ্জাবোধ হল না?
পার্ব্বতী মাথা নাড়িয়া কহিল, কিছু না।
কাল তোমার লজ্জায় কি মাথা কাটা যাবে না?
প্রশ্ন শুনিয়া পার্ব্বতী তীব্র অথচ করুণ দৃষ্টিতে দেবদাসের মুখপানে ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া অসঙ্কোচে কহিল, মাথা কাটাই যেতো—যদি না আমি নিশ্চয় জানতুম, আমার সমস্ত লজ্জা তুমি ঢেকে দেবে।
দেবদাস বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া বলিল, আমি! কিন্তু আমিই কি মুখ দেখাতে পারব?
পার্ব্বতী তেমনি অবিচলিতকণ্ঠে উত্তর দিল, তুমি? কিন্তু তোমার কি দেবদা?
একটুখানি মৌন থাকিয়া পুনরায় কহিল, তুমি পুরুষমানুষ। আজ না হয় কাল তোমার কলঙ্কের কথা সবাই ভুলবে; দু'দিন পরে কেউ মনে রাখবে না—কবে কোন্ রাত্রে হতভাগিনী পার্ব্বতী তোমার পায়ের উপর মাথা রাখবার জন্যে সমস্ত তুচ্ছ করে এসেছিল।
ও কি পারু?
আর আমি—
মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেবদাস কহিল, আর তুমি?
আমার কলঙ্কের কথা বলচ? না, আমার কলঙ্ক নেই। তোমার কাছে গোপনে এসেছিলাম বলে যদি আমার নিন্দে হয়, সে নিন্দে আমার গায়ে লাগবে না।
ও কি পারু? কাঁদচ?
দেবদা, নদীতে কত জল। অত জলেও কি আমার কলঙ্ক চাপা পড়বে না?
সহসা দেবদাস পার্ব্বতীর হাত দুখানি ধরিয়া ফেলিল—পার্ব্বতী!
পার্ব্বতী দেবদাসের পায়ের উপর মাথা রাখিয়া অবরুদ্ধস্বরে বলিয়া উঠিল—এইখানে একটু স্থান দাও, দেবদা!
তাহার পর দুইজনেই চুপ করিয়া রহিল। দেবদাসের পা বহিয়া অনেক ফোঁটা অশ্রু শুভ্র শয্যার উপর গড়াইয়া পড়িল।