পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ֆ ֆ Տ শেষের পরিচয় সমস্ত অন্তর ব্যথিত হইয়া উঠিল। নীরবে বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন । সাস্তুনা দিবার উপায় বা ভাষা কিছুই খুজিয়া পাইলেননা। গোবিন্দজীর আরতির কঁাসির-ঘণ্টা বাজিয়া "উঠিল। রেণু নিজে উপস্থিত থাকিয়া পূজারী ব্রাহ্মণের সাহায্যে আরতি করাইতেছে। ব্ৰজবাবু আরাম কেদারায় সোজা হইয়া উঠিয়া বসিলেন। যতক্ষণ ঘণ্টা কঁাসির নিস্তব্ধ না হইল, ললাটে যুক্ত কর ঠেকাইয়া নতশিরে প্রণামরত রহিলেন । ধূপ, ধূনা, চন্দনকাঠচুর্ণ ও গুগগুলের ধূমসৌরভে শীতল সন্ধ্যার মৃদুবায়ু সুরভিত হইয়া উঠিয়াছিল। কঁাসির ঘণ্টা নিঃশব্দ হইলে তাহার পরও ব্ৰজবাবু অনেকক্ষণ একই ভাবে উদ্দিষ্ট ইষ্টদেবতাকে মনে মনে বন্দনা করিয়া পরে চেয়ারের উপর আবার লম্বা হইয়া শুইয়া পড়িলেন। রেণু আসিয়া তাহাকে গোবিন্দের চরণামৃত ও কমলার রস পান করাইল। একটু পরে রাখাল আসিয়া, বিমলবাবুর সাহায্যে ব্ৰজবাবুকে ঘরের মধ্যে লইয়া গেল। দুইজন মানুষের কঁাধে দুই হাতে অপটু শরীরের ভার রাখিয়া অতি কষ্ট ব্ৰজবাবু অল্প হঁটিতে পারেন। এখনও সমস্ত অঙ্গে স্বাভাবিক জোর ফিরিয়া পান নাই। আহারাদির পর রাত্রে বিমলবাবু কোনও এক সময়ে ব্ৰজবাবুর শয্যাপার্শ্বে আসিয়া বসিলেন। ব্ৰজবাবুর রোগশীর্ণ শিথিল হাতখানি নিজ মুঠায় তুলিয়া লইয়া বিমলবাবু চুপিচুপি কছিলেন, আপনি সন্ধ্যা বেলায় যে প্রস্তাব আমাকে জানিয়েছিলেন, সে সম্বন্ধে একটু ভেবে দেখতে চাই। আপনাকে কাল আমি জানাবো । ব্ৰজবাবু মাথা হেলাইয়া ইসারায় সায় দিলেন। বিমলবাবু উঠিয়া গেলে ছায়াচ্ছন্ন নির্জন কক্ষে শয্যাশায়ী ব্ৰজবাবু অক্ষুদ্টম্বরে বারংবার তঁহার ইষ্টদেবতা গোবিন্দের নাম উচ্চারণ করিতে লাগিলেন ।