পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
২৮

গয়না, কাজের বাড়ি, লোকের ভিড়—বিশ্বাস আছে কাউকে—তাতে এই পাড়াগাঁ জায়গা। বাবা, ভালোয় ভালোয় কাজ মিটিয়ে এখন এখান থেকে বেরুতে পারলে বাঁচি। কাল সারারাত মশায় খেয়েছে।

 বীরেশ্বর বলচে, তা তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে না হয় পশ্চিমের কোঠায় শুয়ো—মাথা গরম কোরোনা, দোহাই তোমার——তোমার মাথা গরম আমার বরদাস্ত হয় না বাপু—

 আমি ঢুকে পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করে বললুম—চিনতে পারেন কাকীমা?

 তিনি কথার উত্তর দেবার পূর্বেই এগারো বারো বছরের একটি মেয়ে কোথা থেকে ছুটে এসে বললে—নাথ্‌নি এখনও পিণ্টুকে দুধ খাওয়ায়নি মা—সকাল থেকে তাকে নিয়ে বাইরের উঠোনে বসে আছে—বললেও শুনচে না—

 বীরেশ্বর বললে—যা এখন যা, বলগে যা নাথ্‌নিকে—আমি ডাকছি। এসো কুঞ্জ বসো। ওগো তুমি কুঞ্জকে চিনতে পারলে না?

 রেশ্বরের স্ত্রী মৃদু হাস্যে বললে—দেখেছি বোধ হয় ওকে ছেলেবেলায়, যাতায়াত নেই—দেখাশুনো তো হয় না, না চিনবার আর দোষ কি বল? শাশুড়ী মারা না গেলে কি এখন আসা হ’ত? চিঠি পেয়ে আমি বলি—না যেতে হবে বই কি, দেশে একটা মানখাতির আছে। শাশুড়ীর কাজটা ভালো করে না করলে লোকে ওঁদেরই দুষবে। বট্‌ঠাকুরের পয়সা নেই সবাই জানে। ওঁদের গাঁয়ে ঘরে নাম রয়েছে, দেশে-দেশে সবাই মানে, চেনে, বলবে——অমুক বাবুর মায়ের শ্রাদ্ধে কিছুই করেনি, বলত বাবা, কথাটা কি শুনতে ভালো?······তাই তো এলুম