পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১২

টানছে। আমি বললুম—কাল আপনার পার্ট বড় চমৎকার হ’য়েছে। বৃদ্ধ আগ্রহের সুরে আমার মুখের দিকে চেয়ে বললে—আপনার ভালো লেগেছে? বললুম—চমৎকার! এমন অনেক দিন দেখিনি!

 কথাটার মধ্যে সত্যের অপলাপ ছিল। বৃদ্ধ খুব খুশি হ’ল, মনে হ’ল প্রশংসা জিনিসটা বেচারীর ভাগ্যে অনেক দিন জোটেনি। আসরে কাল যখন তরুণ অভিনেতাদের বেলায় ঘন ঘন হাততালি পড়েছে, যদু হাজরার ভাগ্যে সে জায়গায় বিদ্রূপ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি।

 বৃদ্ধ বললে—আপনি বোঝেন তাই আপনার ভালো লেগেছে। আর কি মশায় সেদিন আছে? এখানকার সব হয়েছে আট—আর্ট, সে যে কি মাথামুণ্ডু তা বুঝিনে। বৌ-মাস্টারের দলে ভৃগু সরকার ছিল। রাবণের পার্টে অমন এ্যাক্‌টো আর কেউ কখনও করবে না। আমি সেই ভৃগু সরকারের শাগরেদ—বুঝলেন? আমায় হাতে ধরে শিখিয়েছেন তিনি। মরবার সময় আমার হাত ধ’রে ব’লে গেলেন—যদু, তোমায় যা দিয়ে গেলাম, তোমার জীবনে আর ভাবনা থাকবে না।

 আমি বললুম—এ বয়সে আপনি আর চাকুরি কেন করেন?

 —না ক’রে কি করি বলুন? বড় ছেলেটি উপযুক্ত হয়েছিল, আজ বছর দুই হ’ল কলেরা হয়ে মারা গেল। তার সংসার আমারই ওপর, নাতনীটির বিয়ে দিতে হবে আর কিছুদিন পরেই। পয়সা আগে যা রোজগার করেছি, হাতে রাখতে পারিনি। এখন আর তেমন মাইনেও পাইনে। দেড়শো টাকা পর্যন্ত মাইনে পেয়েছি এক সময়—আমার জন্য অধিকারী আলাদা দুধ বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল, যখন ভূষণ দাসের দলে থাকতাম।