পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫
যদু হাজরা ও শিখিধ্বজ 

দেখে কবে কোন মেয়ে তার প্রেমে পড়েছিল, হাতীবাঁধার রাজা নিজের গায়ের শাল খুলে ওর গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিলেন।

 বলতে বলতে মাঝে মাঝে যেন ও অন্যমনস্ক হয়ে পড়চে। পঁচিশ বৎসর আগের কোন্ তরুণী প্রেমিকার হাসিমাখা চাহনি ওর আবেশ মধুর যৌবনদিনগুলির উপর স্পর্শ রেখে গিয়েচে—কে জানে সেই সব দিন, সেই সব বিস্মৃতপ্রায় মুখ ও মনে আনবার চেষ্টা করছিল কিনা। আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললুম—শিখিধ্বজ আর মধুচ্ছন্দার সেই অভিনয় আমার বড় ভালো লাগে, সেই যখন রাজা বললেন, ‘তোমরা প্রেমিক প্রেমিকার মতো হাত ধরাধরি করে চলে যাও’—সেই জায়গাটা এখনও ভুলিনি।

 বৃদ্ধ নট সোজা হয়ে বসল। তার চোখে যৌবন-কালের সেই হারানো দীপ্তি যেন ফিরে এল। বললে—ওঃ, সে কত কালের কথা যে! ও পালা গেয়েছি প্রসন্ন নিয়োগীর দলে থাকতে। দেখবেন—করে দেখাব?

 আমি উৎসাহের সঙ্গে বললুম—মনে আছে আপনার? দেখান না?

 ভাগ্যে পার্কে তখন বিশেষ কেউ ছিল না। বৃদ্ধ উঠে দাঁড়াল—আমি হলুম মধুচ্ছন্দা। ও নিজের পাট ব’লে যেতে লাগল—দেখলুম কিছুই ভোলেনি। শেষে আমার দিকে ফিরে জলদগম্ভীর সুরে বললে—যাও মধুচ্ছন্দা, তোমরা দুজনে প্রেমিক-প্রেমিকার মতো হাত ধরাধরি করে চলে যাও। তারপর আমি কয়েক পা এগিয়ে যেতেই বৃদ্ধ তার সেই পুরানো ট্র্যাজিক সুরে ‘হা-হা-হা-হা’ করে আমার দিকে উদ্‌ভ্রান্তের মতো ছুটে এল। সত্যই কি অপূর্ব সে সুর! কি অপূর্ব ভঙ্গি! ভগ্নহৃদয় বৃদ্ধ