হইবার বাসনা জানাইল না। এ যেন মুগ্ধা নববধূর চারিত্র্যবৃত্তি অবলম্বন করিল দেখিয়া আর হাস্য সংবরণ করা গেল না। অগত্যা ক্ষুণ্ন মনে নবীনারা ফিরিয়া আসিলেন। এ যাত্রার মত এ স্থান দেখিবার আশা পরিত্যাগ করিয়া আমাদের Mantua সেই ফিয়ড্ হইতে বাহিরে আসিয়া আবার সাগরের সঙ্গ লইল।
এবার একটু লম্বা পাড়ি। তিনদিন তীরের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নাই। যতই উত্তরে যাইতে লাগিলাম ততই কেবলই দিনের আলো। লণ্ডন ছাড়িয়া অবধি রাত্রির মুখ বড় দেখি নাই। তা ছাড়া সন্ধ্যা আসিয়া যে একটু উঁকিঝুঁকি মারিত, এখন সে পালাও বন্ধ বলিলেই হয়। এ কি দেশ। সকাল নাই, বিকাল নাই, রাএি নাই, নক্ষত্র নাই, অন্ধকার নাই, অন্ধকারের আভাসও নাই। আকাশে ‘এক ভানু’ বিরাজ করিতেছেন। সকলেরই আলোতে যেন কি রকম অরুচি ধরিয়া গেল। সূর্য্যের উত্তাপ ভাল লাগিবারই কথা; কিন্তু তা বলিয়া চব্বিশ ঘণ্টা, কারই বা তাপ সয়? ঘড়ীর কাঁটার হিসাবে যখন চতুর্থ দিনের দেখা পাওয়া গেল, তখন আবার এক ফিয়ড্ এ আসিয়া পড়িলাম। দুই দিকে পাহাড়ের গায়ে ঘর বাড়ী রাস্তা ঘাট দেখিয়া প্রাণটা জুড়াইল। আবার দূরবীক্ষণ হাতে লইবার ধুম পড়িয়া গেল। আরাম-কেদারা ছাড়িয়া সকলেই আবার চটপট্ আসা যাওয়া করিতে লাগিল। মুখের ম্লান ভাব দূরে গিয়া কৌতূহলের হৃষ্টতায় পরিপূর্ণ হইল। যথানিয়মে সকলে পান আহার করিয়া দিনান্তের ঘড়ীর দিকে ঢাহিয়া দেখিল প্রায় এগারটা, অর্থাৎ আমাদের দেশের তখন রাত্রি দুই প্রহর। আশে পাশে কোথাও আর কৃত্রিম আলো দেখা গেল না। আস্তে আস্তে সকলেই আপন আপন কেবিনের আশ্রয়ে যাইতে বাধ্য হইলেন। নিয়মলঙ্ঘনের ভয়ে আমরাও সে পথই অনুসরণ করিলাম। কিন্তু রাত্রির অন্ধকার ভিন্ন ঘুমাইব কি করিয়া? সময় মত দিবানিদ্রার ত কিছু কসুর হয় নাই? তবে এখন উপায়? ভাবিলাম যদি পুস্তক পড়িতে পড়িতে ঘুমটা আসে। বিনা প্রদীপেই ঘণ্টা খানেক পড়া গেল, তখন আমাদের পরিচারিকা আসিয়া অসময়ে আমাদিগের অধ্যয়নে এ হেন অভিনিবেশ দেখিয়া ঈষৎ হাস্য করিয়া বলিল, “মহাশয়ারা পরদাগুলি ভাল করিয়া টানিয়া দিয়া শুইয়া পড়ন। আর বসিয়া থাকিবেন না।” আমরাও “তথাস্তু” বলিয়া শয্যাশায়িনী হইলাম এবং নিদ্রাদেবীও সহজেই দয়া করিলেন। হঠাৎ জাগিয়া দেখি ভানুদেবের আর কাণ্ডাকাণ্ড বোধ নাই বা সময় অসময় জ্ঞান নাই। তিনি আমাদের মুখের উপর তীক্ষ্ণ রশ্মিজাল ফেলিয়া দিয়া মহা উৎপাত করিতেছেন। আবার