তরঙ্গিত করিয়া শক্তির নব নব লীলা ও সৃষ্টির নব নব মূর্তি প্রকাশ করিয়া তােল। পাগল, তােমার এই রুদ্র আনন্দে যােগ দিতে আমার ভীত হৃদয় যেন পরাঙ্মুখ না হয়। সংহারের রক্ত-আকাশের মাঝখানে তােমার রবিকরােদ্দীপ্ত তৃতীয় নেত্র যেন ধ্রুবজ্যোতিতে আমার অন্তরের অন্তরকে উদ্ভাসিত করিয়া তােলে। নৃত্য করো, হে উন্মাদ নৃত্য করো। সেই নৃত্যের ঘূর্ণবেগে আকাশের লক্ষকোটিযােজনব্যাপী উজ্জলিত নীহারিকা যখন ভ্রাম্যমাণ হইতে থাকিবে, তখন আমার বক্ষের মধ্যে ভয়ের আক্ষেপে যেন এই রুদ্রসংগীতের তাল কাটিয়া না যায়। হে মৃত্যুঞ্জয়, আমাদের সমস্ত ভালাে এবং সমস্ত মন্দের মধ্যে তোমারই জয় হউক।
আমাদের এই খেপা দেবতার আবির্ভাব যে ক্ষণে ক্ষণে তাহা নহে, সৃষ্টির মধ্যে ইহার পাগলামি অহরহ লাগিয়াই আছে— আমরা ক্ষণে ক্ষণে তাহার পরিচয় পাই মাত্র। অহরহই জীবনকে মৃত্যু নবীন করিতেছে, ভালােকে মন্দ উজ্জ্বল করিতেছে, তুচ্ছকে অভাবনীয় মূল্যবান করিতেছে। যখন পরিচয় পাই, তখন রূপের মধ্যে অপরূপ, বন্ধনের মধ্যে মুক্তির প্রকাশ আমাদের কাছে জাগিয়া উঠে।
তার পরে আমার রচনায় বার বার এই ভাবটা প্রকাশ পেয়েছে— জীবনে এই দুঃখবিপদ-বিরােধমৃত্যুর বেশে অসীমের আবির্ভাব―
কহ মিলনের এ কি রীতি এই,
ওগাে মরণ, হে মাের মরণ,
তার সমারােহভার কিছু নেই,
নেই কোনাে মঙ্গলাচরণ?
তব পিঙ্গলছবি মহাজট
সে কি চুড়া করি বাঁধা হবে না?
৫৭