আনন্দ-তুফান/সিদ্ধিপান ও আনন্দলাভ

উইকিসংকলন থেকে
সিদ্ধিপান ও আনন্দলাভ।

সংগ্রামে জিনিলে সেনা,
উল্লাসে মাতিয়া, রাজ্য যথা করে অধিকার,
দিতে তাহ নিজ অধীশ্বরে;–
তেমতি ভকতবৃন্দ রিপুর সংগ্রামে,
অসুর-নাশিনী-শক্তি বলে,—
উড়াইয়া দুর্গানাম-বিজয়পতাকা,
হৃদিরাজ্য করি’ অধিকার,
বসাইলা ‘প্রাণ’-অধীশ্বরে—নিরাপদে।
শান্তি-সতী কিঙ্করী এখন সে সবার।
অবশেষে নিত্যানন্দ-আশে,
সিদ্ধি-সুধা[১] করিতে সেবন,
আরম্ভিলা আয়োজন তা’র[২]
(স্থূল)।ক্ষণকালে পর্ণরূপা সিদ্ধি-স্বরূপিণী,
নানা উপচারে ধরি’ অম্বুময় দেহ,
হাসিলেন সেবক-সম্মুখে;
হাসি-ভরা সে হাসির ছটা।

(সূক্ষ্ম)।—হেরিয়া মোহিনী মূর্ত্তি সুন্দরী ‘সিদ্ধির’—
("বিজয়া-রূপিণী অম্বিকার)
ভক্তদল কৃতাঞ্জলিপুটে—অবনতশিরে—
আরম্ভিলা সিদ্ধি-আরাধনা,
(লক্ষ্য কিন্তু এক সবাকার—
সারাৎসারা বিশ্বস্বরূপিণী।
তা’ই সবে তাঁ’রি নাম স্মরি’) এইরূপে;—
আহা, কে জানে কতই লীলা
বিশ্বপ্রসবিনি মা তোমার,—
দেখায়েছ এ বিশ্বমণ্ডলে!
যে দেখে তোমার খেলা, ‘মনুষ্য’[৩] সে জন;—
ধন্য, ধন্য, ধন্য তাঁর জন্ম ভূমণ্ডলে।
সবি ‘তুমি’ হেরে সে সংসারে—মাতৃময়।
আহা! এই যে সামান্য পর্ণ, ধরে ‘সিদ্ধি’ নাম,
পূর্ণ ইথে, তুমি নাকি তারা—ত্রিতাপ-হারিণি!
প্রাণ মোরে কহে অবিরত।
নতুবা কেন গো শিবে! ‘সিদ্ধি’ নাম ধরে,
বিবর্ণ বিশুষ্ক কলেবর তুচ্ছ পর্ণমাত্র ইহা?
আছে ত কতই নাম শুনি বিশ্বধামে,

‘পয়ঃ’, ‘মধু’ বড়ই মধুর;
‘বিষ্ঠা’, ‘মূত্র’ হেয় কত নাম;
কেন না পাইল এই শুষ্কপর্ণ তাহা—স্বেচ্ছামতে?
বল না মা, সিদ্ধি-স্বরূপিণি!—
‘সিদ্ধি’ নাম কে দিল ইহারে—কোথা হ’তে?
বুঝেছি কৌশল তব, নিত্য-লীলাময়ি!
লীলা ইহা তোমারি নিশ্চয় বিশ্বধামে।
জানাইতে বিশ্ববাসী আত্মহারা জীবে,—
সর্ব্বভূতে তুমি বিরাজিতা
পূর্ণরূপে সিদ্ধি স্বরূপিণি!
তা’ই পর্ণরূপে হরিত বসনে[৪]
‘সিদ্ধি’-নামে হয়েছ প্রকাশ।”—
ভক্ত-দলে চিনে মা, তোমারে;
ভুলে না সেবিতে তব অভয় চরণ,
ভব-ভয় ভুলিবে ভাবিয়া;
তা’ই সদা উল্লাসে মাতাল সবে হেরি।”
(মন্ত্র)।এস মা এস মা সিদ্ধি—সিদ্ধিস্বরূপিণি!
সেবিব[৫] তোমারে আমি শিবে!



‘শিব’ যাহা সেবিয়া সতত,
মৃত্যুঞ্জয়—মহেশ্বর শুনি।
বিতর আনন্দ দীনে সদানন্দময়ি!—
নিত্যানন্দ লভি মা সংসারে।
যে ক’দিন থাকি ভবে,
না চাহি ভাঙ্গিতে দেহ-বাস,
নাহি চাহি তুচ্ছ রাজ্য-সুখ,
প্রিয়জনে নাহি প্রয়োজন—মায়াময়;
এক প্রিয় চাহে প্রিয় সদা,
বড় সাধ সন্তানের পূরাও শিবানি!
কিন্তু এই ভিক্ষা গো জননি!
প্রাণ মোর করে ও চরণে নিরন্তর,—
“নেশা যেন না ধরে আমায়”;
মায়া-নেশা বিষম সঙ্কট;
আত্মহারা হয় জীব তাহে;
শঙ্কা তা’ই হয় গো শঙ্করি!—মাঝে মাঝে।



  1. সিদ্ধিকে সিদ্ধিদায়িনী বা ‘সিদ্ধিস্বরূপিণী’ সুধা-রূপে প্রস্তুত করিতে হইলে, যে সকল উপচার-সংগ্রহের প্রয়োজন, তাহা এই আনন্দ-তুফানের ক্ষুদ্র দেহে প্রকাশ করিবার স্থান নাই।
  2. সিদ্ধিকে সেবা-রূপে এবং সেবককে প্রকৃত সেবক বা দাস রূপে প্রস্তুত করিবার আয়োজন করিতে লাগিলেন।
  3. প্রকৃত ‘মনুষ্য’ কে? তদ্বিবরণ জীবন-পরীক্ষার উপসংহারে লেখকের সামর্থ্যানুসারে বিবৃত হইয়াছে।
  4. হরিত-বসন-সিদ্ধিপত্রের পক্ষে সবুজ ‘বর্ণই’ উহার বসন-স্বরূপ।
  5. এক অর্থে সেবন করা, অর্থান্তরে পূজা করা বুঝাইতেছে।