পাখীর কথা/প্রথম ভাগ/পাখী-পোষা (৩)

উইকিসংকলন থেকে

পাখী-পোষা

(৩)

 অনেক যত্ন করিয়া পাখীর ঘরকন্না সাজাইয়া দেওয়া হইয়াছে; কিন্তু তাহাদের মিলনের কথা আলোচনা করিতে বসিলে যে সকল সমস্যা আসিয়া পড়ে, তাহাদিগের সমাধান কেহই সম্যক্‌রূপে এখন পর্য্যন্ত করিতে পারেন নাই। এই মিলনকালকে যদি তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়, তাহা হইলে দেখিতে পাওয়া যাইবে যে, প্রথম অঙ্কে—প্রাঙ্‌মিথুন-লীলায় (period of courtship)—প্রাঙ্‌মিথুন-লীলাপক্ষিণীর মনোরঞ্জন করিবার জন্য পুংপক্ষিগণের কত ভাবভঙ্গী, কত বিচিত্রবর্ণচ্ছটাপ্রচার, কত রেষারেষি দ্বেষাদ্বেষি, কত সঙ্গীতোচ্ছ্বাস পক্ষিগৃহমধ্যে মর্ম্মরিত, হিল্লোলিত, তরঙ্গায়িত হইয়া উঠে। বিস্মিত ও পুলকিত পালক অনেক সময়ে বুঝিয়া উঠিতে পারেন না যে, পক্ষিণী কিসে মুগ্ধ হয়—পৌরুষে, না সৌন্দর্য্যে? প্রকৃতির অনুকরণে নির্ম্মিত ও সজ্জিত নিকুঞ্জে মানুষ দেখিতেছেন যে—নেয়ম্ পক্ষিণী বলহীনেন লভ্যা, এই পক্ষিণীটিকে বলহীন পক্ষী লাভ করিতে সমর্থ হয় না। আবার তিনি দেখিতে পান যে, পাখীর বিচিত্র বর্ণচ্ছটায় মুগ্ধ হইয়া পক্ষিণী পুংপক্ষীর নিকট আত্মসমর্পণ করিবার জন্য ব্যগ্র হইয়া উঠে। রূপের মোহ পিঞ্জরাবদ্ধ পক্ষিণীকে কত চঞ্চল করিয়া তোলে তাহা পরীক্ষা করিবার জন্য পাশ্চাত্য কোনও কোনও বিহঙ্গতত্ত্ববিৎ একপ্রকার বৃহৎ খাঁচার মধ্যে পাশাপাশি তিনটি কামরার দুইটীতে এক একটি করিয়া পুংপক্ষী এবং অবশিষ্ট কামরায় সেই জাতীয় একটি পক্ষিণীকে রাখিয়া উহাকে স্বয়ম্বরা হইবার সুযোগ দিয়া এই সমস্যার চূড়ান্ত মীমাংসা করিবার প্রয়াস পাইয়াছেন। তাঁহারা খাঁচাটি এরূপভাবে বিভক্ত করিলেন যে, অভ্যন্তরস্থ দুইটি প্রাচীর ছাদ পর্য্যন্ত না পঁহুছাইয়া মধ্যপথে শেষ হইয়া গেল। ছাদের নিম্নে সমস্ত খাঁচাটার মধ্যে একটা পাখীর চলাফেরার সুবিধামত অবারিত মুক্ত পথ থাকিয়া গেল। দুই পার্শ্বের কামর দু’টিতে একজাতীয় দুইটি পুংপক্ষীকে রাখা হইল। যাহাতে তাহারা সমস্ত খাঁচার মধ্যে ইচ্ছামত উড়িতে না পারে, এবং তাহাদের কামরার প্রাচীর উল্লঙ্ঘন করিয়া কোটর হইতে কোটরান্তরে যাতায়াত কৃরিতে না পারে, সেইজন্য তাহাদিগের পক্ষচ্ছেদন করা হয়;—এক পার্শ্বের ডানার কতকগুলি পতত্র ছেদন করিলেই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়। সাধারণতঃ মাঝের কামরায় স্বচ্ছন্দবিচরণশীল পক্ষিণী রক্ষিত হয়। এস্থলে লক্ষ্য করিতে হইবে যে, তিনটি পাখীই একজাতীয়। পুরুষ দুইটির বর্ণের অল্পবিস্তর তারতম্য আছে। কিয়ৎকাল অবস্থানের পর প্রায়ই দেখা যায় যে, পক্ষিণী নিজের কামরা পরিত্যাগ করিয়া অপেক্ষাকৃত অধিক রূপবান্ পক্ষীটির সহিত মিলিত হইবার জন্য স্বেচ্ছায় তাহার কামরায় প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে অবশ্যই পক্ষিণীকে পাইবার জন্য পুংপক্ষিদ্বয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও জয়-পরাজয়ের কোনও অবকাশ দেওয়া হয় নাই। এইরূপে একশ্রেণীর পক্ষিপালক ornithology’র দিক্ হইতে ডারউইনীয় নৈসর্গিক নির্ব্বাচন-তত্ত্বের যাথার্থ্য প্রতিপন্ন করিতে চেষ্টা করেন; কিন্তু এখনকার পক্ষিবিজ্ঞানে নিঃসংশয়রূপে কেহই জোর করিয়া বলিতে পারেন না যে, পুংপক্ষীর শারীরিক সৌন্দর্য্য ও যৌননির্ব্বাচনের মধ্যে এতটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। পক্ষিণীর এমন সূক্ষ্ম সৌন্দর্য্যবোধ থাকিতে পারে কি না সে সম্বন্ধে যথেষ্ট মতদ্বৈধ রহিয়াছে[১]। পক্ষিণীকে পাইবার জন্য পুংপক্ষিদ্বয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও জয়-পরাজয়ের অবকাশ দেওয়া হইলে সাধারণতঃ কি ফল পাওয়া যায় তাহা পূর্ব্বে কিঞ্চিৎ আলোচনা করিয়াছি। বিজেতার সহিত পক্ষিণী ঘরকন্না পাতিয়া বসে। সে যে বিজেতাকে স্বেচ্ছায় বরণ করিয়া লইয়াছে এমন কথা বলা যায় না। আশা করা যায় ভবিষ্যতে আরও অধিক পর্য্যবেক্ষণের ফলে এই biological বা জীবতত্ত্বসম্বন্ধীয় এবং psychological বা মনস্তত্ত্বসম্বন্ধীয় কূট সমস্যার সম্যক্ সমাধান হইবে।

 প্রাঙ্‌মিথুনলীলা সমাপ্ত হইতে না হইতেই পক্ষিদম্পতির বাসা-নির্ম্মাণের ধূম পড়িয়া যায়। পুংপক্ষী এত উদ্যম সহকারে এই কার্য্যে ব্রতী হয় যে, অনেক সময়ে খড়কুটা সংগ্রহের আতিশয্যে নীড়টিনীড়-রচনা পক্ষিণীর মনোমত হয় না:— পক্ষিণী হয় নীড়টি নষ্ট করিয়া ফেলে, না হয় অপর নীড়নির্ম্মাণে ব্যাপৃত হয়। এমনও প্রায় দেখা যায় যে, নীড় রচনা অনেকদূর অগ্রসর হইয়াছে, কিন্তু যে কোনও কারণে হউক উহা পক্ষিণীর ভাল লাগিতেছে না; উহাদিগের ব্যর্থ পরিশ্রমের নিদর্শনস্বরূপ অর্দ্ধরচিত নীড়টি অসম্পূর্ণ অবস্থায় ফেলিয়া রাখিয়া বিহগমিথুন অপর স্থানে অন্য মাল-মস্‌লার সাহায্যে আবার নূতন করিয়া বাসা প্রস্তুত করিতে আরম্ভ করে। এই রহস্যময় ও কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার প্রায়ই আমাদের কৃত্রিম পক্ষিগৃহ-মধ্যে দেখিতে পাওয়া যায়; বনে জঙ্গলেও এই প্রকার অসম্পূর্ণ পরিত্যক্ত নীড় ইতস্ততঃ দৃষ্ট হইয়া থাকে। এরূপ অবস্থায় পক্ষিপালককে নিশ্চেষ্ট থাকিলে চলিবে না; পক্ষিপ্রকৃতির ভ্রমসংশোধনের ও ত্রুটিপরিমার্জ্জনের ভার কতকটা তাঁহাকে লইতে হইবে। কৃত্রিম গৃহমধ্যে খড়কুটা যোগাইয়া দিয়া বাসা-নির্ম্মাণের উপযোগী আধার যথাস্থানে সন্নিবেশিত করিয়া, কি সময়ে সময়ে পক্ষিদম্পতির কুলায়-নির্ম্মাণের অপটুত্বের সংশোধন করিয়া দিয়া অর্থাৎ অনভিজ্ঞ পক্ষিযুগলের বাসা-রচনার ক্রটি মার্জ্জিত করিয়া, তাঁহাকে সদাই সচেষ্ট থাকিতে হইবে, যেন অত্যাবশ্যক উপকরণগুলির অভাবে অথবা পক্ষিদ্বয়ের নির্বুদ্ধিতাবশতঃ উপকরণদ্রব্যাদির অযথা-বিন্যাসে ভবিষ্যতে নীড়মধ্যে ডিম্ব-সংরক্ষণের ব্যাঘাতের আশঙ্কা না থাকে। পক্ষিগৃহে রোপিত বৃক্ষগুলির শাখান্তরালে পাখীরা বাসা প্রস্তুত করিবার উপযুক্ত স্থান পায়। যে সকল পক্ষী গর্ত্ত মধ্যে অণ্ড প্রসব করে, তাহাদিগের নিমিত্ত তরুকোটরই উপযুক্ত স্থান; ইহার অভাবে প্রাচীরগাত্রে গর্ত্ত করিয়া দিতে হইবে অথবা গর্ত্তের অনুরূপ কাষ্ঠের বা নারিকেলের মালার আধার প্রাচীরগাত্রে সংলগ্ন রাখা আবশ্যক। শ্যামল তৃণাচ্ছাদিত মেজের একপার্শ্বে কৃত্রিম ঝোপের মধ্যে ভূমিতে বিচরণশীল পাখীরা বাসা-নির্ম্মাণে তৎপর হইবে।

 এইরূপে বিভিন্ন-প্রকৃতির পাখী ভিন্ন ভিন্ন প্রকার কুলায় নির্ম্মাণ করিতে আরম্ভ করিল; ক্রমশঃ তাহাদের নীড়-রচনা প্রায় সম্পূর্ণ হইয়া আসিল; আমি পূর্ব্বে পক্ষিজীবনের নীড়-রচনারূপ যে দ্বিতীয় পর্ব্বের উল্লেখ করিয়াছিলাম সেই পর্ব্ব প্রায় সমাপ্ত হইয়া আসিল; এখন বিহগমিথুনলীলার তৃতীয় পর্ব্বে আমরা উপনীত হইলাম। পক্ষিজীবনের এই পর্ব্বটি অত্যন্ত বিচিত্র ও রহস্যময়। যথেষ্ট শ্রমস্বীকার করিয়া এতদিন পরে তাহাদের নীড়রচনা-কার্য্য শেষ হইল বটে, কিন্তু এখনও তাহাদের পরিশ্রমের লাঘব হইতেছে মনে করিলে চলিবে না। যথাকালে ডিম্বগুলি প্রসব করিয়াও পক্ষিণী নিষ্কৃতি লাভ করে না, প্রসবের পর হইতেই একাগ্রমনে দিবারাত্র সেই ডিম্বগুলির উপর তাহাকে সন্তর্পণে বসিয়া থাকিতে হইবে। যতদিন না ডিম ফুটিয়া শাবক বাহির হয়, ততদিন সে কোনও দিকে দৃক্‌পাত না করিয়া আপন মনে উহাতে তা দিতে থাকিবে। দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ অতিবাহিত হইয়া যায়, তথাপি সে অবিচলিত চিত্তে তাহার ব্রত উদ্‌যাপন না হওয়া পর্য্যন্ত একভাবে বসিয়া থাকে। এ’ত মন্দ রহস্য নয়। যে পক্ষিণী চিরদিন অত্যন্ত চঞ্চল প্রকৃতি বলিয়া আমাদের নিকট পরিচিত; সারাদিন পক্ষ-বিস্তার করিয়া আকাশমার্গে উড্ডীয়মান হইতে ভালবাসিত; আজ কোন্ মায়ামন্ত্রবলে তাহার স্বভাবের এত পরিবর্ত্তন সংঘটিত হইল? হঠাৎ সে কেমন করিয়া এমন স্থাণুত্ব প্রাপ্ত হইল। একেবারে নিশ্চল হইয়া এতক্ষণ একই ভাবে তাহার বাসাটির উপরে সে বসিয়া রহিল! হয় ত সে হিংস্রস্বভাব; অসহায় কীটপতঙ্গকে ও বিজাতীয় পক্ষিশাবককে সে চিরদিন নিজ ভক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করিয়া আপনার উদরপূর্ত্তি করিতে ভালবাসিত; আজ সে অত্যন্ত স্নেহপরবশ হইয়া তাহার গলাধঃকৃত আহার্য স্বেচ্ছায় উদ্গীরণ করিয়াডিম্বপ্রসব ও পাখীর চরিত্র-পরিবর্ত্তন শাবকের মুখে তুলিয়া দিতেছে! হয় ত সে ভীরুস্বভাবা; সাধারণতঃ আত্মরক্ষার জন্য সভয়ে মানুষের নিকট হইতে বহুদূরে বিচরণ করে; আজ সে একেবারে নির্ভীক! তাহার আচরণ দেখিয়া কিছুতেই মনে করা যায় না যে, সে স্বভাবতঃ মানবভয়ভীতা; এখন মানুষ তাহার কাছে আসিতেছে; তাহার গায়ে হাত দিতেছে, হয়ত তাহাকে তাহার বাসা হইতে ঊর্দ্ধে উত্তোলিত করিতেছে[২]; কিন্তু কিছুতেই তাহাকে বিচলিত করিতে পারিতেছে না। পুংপক্ষী সাধ্যমত অহাকে চঞ্চুপুটের সাহায্যে আহার যোগাইতেছে; সর্ব্বদাই গান গাহিয়া তাহার মনোরঞ্জন করিতে প্রয়াসী রহিয়াছে। উভয়ের এই যে সাধনা, ইহাতে বিশ্বপ্রকৃতির উদ্দেশ্য সাধিত হইয়া থাকে বটে; ইহার পশ্চাতে যে নিগুঢ় শক্তি যবনিকার অন্তরালে প্রচ্ছন্ন থাকিয়া বিহগযুগলের দাম্পত্যলীলায় এইভাবে ক্রিয়া করিতে থাকে, তাহাকে Instinct বলিতে হয় বলুন;—হয় ত Instinct বলিয়া তাহার পরিচয় দিবার যথেষ্ট কারণ এক্ষেত্রে বিদ্যমান রহিয়াছে। বোধ হয় এই Instinct-তত্ত্ব কতকটা মানিয়া লইলে পক্ষিজীবনের এই ডিম্ব-ঘটিত আর একটি কূট সমস্যার সমাধানের কিছুবিচারশক্তি ও পরভৃৎ-রহস্য সুবিধা হইতে পারে;—সেই parasitism বা পরভৃৎ-রহস্যের কথা এইখানে স্বতঃই আসিয়া পড়িতেছে। পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে যে আমি পাখীর এই তথাকথিত Instinct সম্বন্ধে পূর্ব্বে কিঞ্চিৎ আলোচনা করিয়াছি। নূতন করিয়া সে বিষয়ে এখন বিশেষ কিছু বলিবার পূর্ব্বে নূতন পরিবেষ্টনীর মধ্যে পক্ষিজীবনের এই অভিনব রহস্য সম্বন্ধে সাধারণতঃ যে সকল ঘটনা অবলম্বন করিয়া পক্ষিতত্ত্ববিদ্‌গণ কার্য্যকারণ-নির্ণয়ে প্রায় একমত হইয়াছেন, সেইগুলির কিঞ্চিৎ আলোচনা আবশ্যক।

 আলোচনার বিষয় এই যে, ডিম্ব প্রসবের পর পক্ষিণী বিচারশক্তিহীন কলের পুতুলের মত, ইচ্ছাশক্তিবিরহিত automatonএর মত কাজ করে কি না? এ সম্বন্ধে পক্ষিতত্ত্ববিদ্‌গণের মধ্যে যথেষ্ট মতজেদ আছে। তাঁহারা সকলেই হয় ত পাখীর instinct গোড়া হইতেই স্বীকার করিয়া লইতে প্রস্তুত আছেন; কিন্তু অবস্থা-বিশেষে পাখী যে মাত্র একটা যন্ত্র-বিশেষে পর্য্যবসিত হইয়া শুধু automatonএর মত ক্রিয়া করিয়া থাকে, ইহা ভারতীয় সিভিল সার্ব্বিসের স্বনামখ্যাত ডগ্‌লাস্ ডেওয়ার (Douglas Dewar) প্রমুখ বিহঙ্গতত্ত্বজ্ঞেরা জোর করিয়া প্রচার করিলেও, তাহার বিচারশক্তি অথবা Reasonএর একান্ত অভাব সম্বন্ধে সন্দেহ করিবার প্রচুর কারণ বিদ্যমান আছে। সকলেই জানেন যে, কাকের বাসায় কোকিল ডিম রাখিয়া যায়; কোকিলের ডিমটি আয়তনে এত ছোট যে তাহা কখনই কাকের ডিম বলিয়া ভ্রম জন্মাইতে পারে না। উভয়ের বর্ণ-বৈষম্যও[৩] অত্যন্ত প্রকট। ভূমিতলে অণ্ড প্রসব করিয়া সেই সদ্যঃপ্রসূত ক্ষুদ্র অণ্ডটিকে চঞ্চুপুটে[৪] ধারণপূর্ব্বক পক্ষিণী বায়সকুলায় সমীপে উপস্থিত হয়; পুংপক্ষীটিও তাহার সহগামী হইয়া থাকে। উভয়েই জানে যে, কাকের বাসায় কোকিলের ডিম রাখা সম্বন্ধে বায়সপ্রবরের ঘোরতর আপত্তি আছে; কাক কখনও সজ্ঞানে কোকিলকে তাহার নীড়ের মধ্যে ডিম্বটিকে রাখিতে দিবে না। কোকিল তাহার বাসার সম্মুখে আসিয়াছে দেখিলেই সে তাড়া করিয়া যায়। পুরুষ কোকিল অগ্রসর হইয়া নীড়রক্ষক বায়সের সম্মুখীন হয়; ক্রুদ্ধ কাক তাহার পশ্চাদ্ধাবন করে; এই অবসরে স্ত্রী কোকিল সেই নীড়ের মধ্যে কাকের ডিমের পাশে নিজের ডিমটী সযত্নে রাখিয়া দিয়া চলিয়া যায়। খানিক পরে কাক ফিরিয়া আসিয়া নীড়স্থ সমস্ত ডিমগুলিতেই তা দিতে থাকে,—একটা ডিম যে বাড়িয়া গেল এবং সেটা যে সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতীয়, সে সম্বন্ধে তাহার মনে কোনও ধোঁকা লাগে না। প্রকৃতির লীলাকুঞ্জে এই যে পাখীর লুকোচুরি খেলা, বংশরক্ষার জন্য বৈরীর আলয়ে কোকিল-দম্পতির কাককে ফাঁকি দিয়া এই যে ডিমটি রাখিয়া আসা, এই প্রকাণ্ড রহস্যময় ব্যাপারটি পর্য্যালোচনা করিলে কি কেবলমাত্র অন্ধ instinctএর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ব্যতীত আর কিছুই আমরা উপলব্ধি করি না? শুধু অর্দ্ধসুপ্ত অর্দ্ধ-জাগ্রত অন্ধ instinct বহুযুগ ধরিয়া একটা বিহঙ্গ জাতিকে রক্ষা করিয়া আসিতেছে? অনেক গবেষণার পর instinct-পক্ষপাতী ডেওয়ারকেও স্বীকার করিতে বাধ্য হইতে হইয়াছে যে, পাখীর এই সহজ বুদ্ধিও সীমাবদ্ধ; তাহাকে অতিক্রম করিয়া তাহার বিচারশক্তি (intelligence) অনেক সময়ে কাজ করিয়া থাকে:—there is apparently a limit to the extent to which intelligence is subservient to blind instinct[৫].

 পরভৃৎ-রহস্যের প্রথম ঘটনার উল্লেখ করিয়াছি,—ফাঁকি দিয়া পরের বাসায়, শত্রুর বাসায় ডিমটিকে রাখিয়া আসা। মাঝে মাঝে কোকিল আসিয়া কাকের ডিমগুলিকে নীড় হইতে ফেলিয়া দেয়, হয়’ত সেইস্থানে আরও দুটো একটা নিজের ডিম রাখিয়া যায় (তাহার পূর্ব্ব রক্ষিত ডিমটিকে অবশ্যই সে স্থানচ্যুত করে না); অনেক সময়ে মানুষেও কাকের ও কোকিলের ডিম লইয়া অদল বদল করিয়া কাকের স্বভাব-বৈচিত্র্য পরীক্ষা করিয়া থাকে; এমন কি ডিমের পরিবর্ত্তে golf ball রাখিয়া আসে[৬]; পাখী নির্ব্বিকার চিত্তে কোনও সন্দেহ না করিয়া সেই কন্দুকের উপর উপবেশন করিয়া তা দিতে থাকে। ডগ্‌লাস্ ডেওয়ার এই সমস্ত ঘটনা স্বচক্ষে দেখিয়া পাখীর বিচারবিমূঢ়তা সম্বন্ধে স্থির-নিশ্চয় করিয়া বসিয়া আছেন বটে; কিন্তু তিনি ইহাও লক্ষ্য করিয়াছেন যে, পাখীকে যতটা মূঢ় বলিয়া মনে হয় ঠিক সে ততটা নহে;—অনেক সময়ে সে জুয়াচুরি ধরিয়া ফেলে; জাল-ডিম্বের উপর হয় ত বসিতে রাজি হয় না, নয় ত ডিম ফুটাইয়া বিজাতীয় পক্ষিশাবককে সংহার করিয়া ফেলে। এই সমস্ত রহস্যময় ঘটনার সমাবেশ দেখিয়া ঠিক করিয়া বলা কঠিন যে, পাখীর সহজবুদ্ধির দৌড় কতদূর; আর কোথায় এবং কখন তাহার বিচারশক্তি জাগ্রতভাবে ক্রিয়া করিতে আরম্ভ করিল, ইহাও নির্ণয় করা সহজ নয়।

 কোন্ দূর অতীতে কোন্ এক অখ্যাত দিবসে বিহঙ্গজীবনে এই পরভৃৎ-রহস্যের প্রথম সূচনা হইয়াছিল, প্রকৃতির রঙ্গমঞ্চে সেই বিচিত্র রহস্য-যবনিকা আজও পর্য্যন্ত উত্তোলিত হয় নাই। একটা পাখীকে বাঁচাইবার জন্য লীলাময়ী প্রকৃতি কেন যে এই খেলা খেলিলেন, এবং কবে ইহার আরম্ভ, ইহার তত্ত্ব এখনও—‘নিহিতং গুহায়াম্’। নিশ্চয়ই বহু যুগ ধরিয়া বংশপরম্পরায় কোকিল এইরূপে আপনাকে বাঁচাইয়া আসিতেছে; এই অভ্যাসটা যে ইহাদের মজ্জাগত, ইহা স্বীকার করিয়া লইলেও, ঠিক করিয়া বলা কঠিন, কি অবস্থায় এই অভ্যাসের সূত্রপাত হইল। অনেক সময়ে দেখা গিয়াছে যে, এক জোড়া পাখী তরুকোটরে অথবা বৃক্ষ-শাখার পত্রান্তরালে যথারীতি নীড় নির্ম্মাণ করিয়া তন্মধ্যে সন্তর্পণে নিজেদের সদ্যপ্রসূত ডিমগুলি রক্ষা করিতেছে; এমন সময়ে আর এক জোড়া অপর জাতীয় অধিক বলশালী পাখী আপনাদিগের নীড়োপযোগী স্থানের অন্বেষণে তথায় উপস্থিত হইয়া নীড়স্থ বিহঙ্গযুগলকে তাড়াইয়া দিয়া সডিম্ব সেই নীড়টি অধিকার করিয়া বসে। আমার পক্ষিগৃহ মধ্যে পক্ষিজীবনের এই বিচিত্রলীলা অনেকবার দেখিয়াছি। এক জোড়া (Ribbon Finch) একটা নারিকেল মালার মধ্যে বাসা তৈয়ার করিয়া ঘরকন্না করিতে লাগিল, যথা সময়ে স্ত্রী-পক্ষীটি ডিম্ব প্রসবও করিল। এমন সময়ে সেই পক্ষিগৃহের অভ্যন্তরস্থ একত্র সংরক্ষিত নানা পক্ষীর মধ্যে এক জোড়া সাদা রামগোরা (Java sparrow) সহসা সেই নারিকেল মালাটির প্রতি আকৃষ্ট হইয়া ফিঞ্চ-মিথুনকে নীড়চ্যুত করিল। সেই মালাটির মধ্যে এখন তাহারা গৃহস্থালী আরম্ভ করিয়া দিল। প্রত্যহই আমি তাহাদের জীবন-রীতি লক্ষ্য করিতেছিলাম; দেখিলাম তাহারা যথাসময়ে ডিম পাড়িল। কিছুদিন পরে দেখা গেল যে, দুটি ডিম ফুটিয়া দুটি বিভিন্ন জাতীয় পক্ষিশাবক বাহির হইয়াছে,—একটি সাদা রামগোরার বাচ্ছা, অপরটি ধূসর ফিঞ্চ-শাবক। মজা এই যে, ধাড়ি রামগোরা পক্ষিণীটি অপত্যনির্ব্বিশেষে উভয়কেই লালন করিতে লাগিল। এইরূপ ঘটনা বিরল নহে। আবদ্ধাবস্থায় পক্ষিগৃহমধ্যে পিদ্‌ড়ি মুনিয়া (Indian silverbill) জাপানী মুনিয়া কর্ত্তৃক আক্রান্ত হইয়া নীড় ছাড়িয়া পলাইতে বাধ্য হয়। নীড়চ্যুত মুনিয়ার পরিত্যক্ত ডিম্বগুলিকে তাহার জাপানী জ্ঞাতি সযত্নে ফুটাইয়া তোলে। শুধু কৃত্রিম পক্ষিগৃহ মধ্যে আবদ্ধাবস্থায় যে এইরূপ ঘটিয়া থাকে তাহা নয়; মুক্ত প্রকৃতির লীলাকুঞ্জে একের বাসা অন্যে কাড়িয়া লয়,—কাঠঠোক্‌রার বাসা সালিকের অধিকারে আসে, pheasant ও তিতির পরস্পরের বাসা অধিকার করিয়া পরস্পরের ডিম্বে তা দেয়, তালচঞ্চুর বাসায় চড়াইয়ের আবির্ভাব হয়। এই বিরোধকে আমরা স্বীকার করিয়া লইতে প্রস্তুত আছি; অতি প্রাচীন যুগ হইতে এই দ্বন্দ্ব-কলহ পক্ষিজগতে চলিয়া আসিতেছে, অথচ ইহারই ভিতর দিয়া পাখীকে আত্মরক্ষা করিবার উপায় আবিষ্কার করিতে হইয়াছে; যে পাখী সদুপায় অবলম্বন করিতে পারে নাই, সে লুপ্ত হইয়াছে। যে দিন পক্ষিদম্পতী প্রথম দেখিল যে, অপরে তাহার পরিত্যক্ত ডিমটিকে সযত্নে রক্ষা করে, সেই দিন হইতে তাহারা পরের উপর নির্ভর করিতে শিখিল। কালক্রমে ডিম্ব-প্রসবের পর তাহা ফুটাইয়া তোলার অভ্যাসটুকু পর্য্যন্ত তাহাদের নষ্ট হইয়া গেল;—পক্ষিজীবনের এই বিচিত্র biologic processএর মধ্যে পরভৃৎ-রহস্য বংশ-পরম্পরায় বেশ জটিল হইয়া দাঁড়াইল। বৈজ্ঞানিক তত্ত্বজিজ্ঞাসুর নিকটে হয় ত এ সম্বন্ধে ইহাই শেষ কথা নহে; ইহা একটা theory মাত্র; কিন্তু অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ব্যাপারের মত এক্ষেত্রে একটা theoryর আশ্রয় না লইলে আপাততঃ এই জটিল ব্যাপারের ব্যাখ্যা সম্ভবপর হয় না। একজন পক্ষিতত্ত্ববিদ্ লিখিতেছেন[৭]—We can of course presume that parasitism may be the retained habit of some ancestral form of the species practising it at the present time, and acquired during conditions of existence of which we can have no possible conception now-a-days. We can also suggest in its explanation that the habit may have prevailed more widely during earlier epochs of avine existence. The fact that every detail and condition of the habit is so marvellously perfect seems to suggest its long-continued duration. আর একজন লিখিতেছেন[৮]—Just as it is conceivable that in the course of ages that which was driven from its home might thrive through the fostering of its young by the invader, and thus the abandonment of domestic duties would become a direct gain to the evicted house-holder; so the bird which through inadvertence or through any other cause adopted the habit of casually dropping her eggs in a neighbour’s nest, might thereby ensure a profitable inheritance for endless generations of her off-spring. এস্থলে বলা আবশ্যক যে, ধাড়িরা কর্ত্তব্য-পালনে পরাঙ্মুখ হইয়া এই পরভৃৎ-জাতির সৃষ্টি করিল কিনা সে সম্বন্ধে যথেষ্ট মতভেদ আছে। কেহ কেহ বলেন যে, এ বিষয়ে সর্ব্বপ্রথমে বোধ হয় পক্ষিশাবকই দায়ী। একদিন সে অসহায় অবস্থায় কোন গহন কাননে অথবা মরু-প্রান্তরে তাহার নিষ্ঠুর মাতা কর্ত্তৃক পরিত্যক্ত হইয়াছিল; সেই অসহায় অবস্থায় আর একটা ভিন্নজাতীয় পাখী দয়াপরবশ হইয়া তাহাকে অপত্যনির্ব্বিশেষে লালন করিতে লাগিল। কিছুকাল পরে সে তাহার ধাত্রীর আবাস হইতে উড়িয়া চলিয়া গেল। সে যখন আবার কালক্রমে জনক অথবা জননী হইয়া কোনও কারণে নিজ নীড়ে ডিম ফুটাইবার সুবিধা পাইল না, তখন হয় ’ত নিজের শৈশব-কথা স্মরণ করিয়া যে-পাখীর কাছে আদর যত্ন পাইয়া অত্যন্ত নিরুপায় অবস্থায় লালিত ও বর্দ্ধিত হইয়াছিল, সেই জাতীয় পাখীর কুলায়ে ডিম্বটি রাখিয়া আসিলে তাহা সযত্নে রক্ষিত হইবে এই স্থির করিয়া হয় ’ত সে স্বেচ্ছায় পরের বাসায় নিজের শাবক ফুটাইয়া লইতে আরম্ভ করিল। ইঁহারা বলেন যে, সম্ভবতঃ parasitismএর ইতিহাসের গোড়ার সঙ্গে বোধ হয় এমনই করিয়া পাখীর শৈশব-স্মৃতি জড়িত হইয়া আছে। ইহাও একটা theory মাত্র। এখানেও দেখা যাইতেছে যে, একটা বড় ‘হয় ত’ রহিয়া গেল। উপায় নাই; কারণ এ সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক হিসাবে শেষ পাকা কথা এখনও বলা যায় না।


  1. “Many writers seem to find a difficulty in imagining that the female sex among birds is sufficiently endowed mentally to possess the requisite æsthetic sense, and, indeed, evidence that female birds do consistently prefer the more beautiful males, or even that they are pleased by the display of the latter, is not very abundant."
    —Ornithological and other Oddities, 
    by F. Finn, p. 7.

    “We are not justified in saying positively that the raison d’ etre of these decorations is the attraction of a wife, though a priori reasoning certainly leads to this conclusion.” Ibid, p. 12.

  2. আমাদের পক্ষিগৃহমধ্যে পাখীর ডিম লইয়া এই অবস্থায় অনেক প্রকার নাড়াচাড়া করা হইয়াছে। আমি নিজে লক্ষ্য করিয়াছি যে, কেনেরি (Canary) পাখী যখন তাহার ডিমে তা দিতে থাকে, তখন তাহার গাত্র স্পর্শ করিলেও সে সঙ্কুচিত হয় না; এমন কি তাহাকে হাতে করিয়া ধরিয়া তুলিয়া লইবার উপক্রম করিলেও সে সেই ডিম পরিত্যাগ করিয়া পলায়নের চেষ্টা করে না। এতদ্ব্যতীত তাহার আসল ডিম্বটি সরাইয়া লইবার জন্য তাহাকে উঠাইয়া একটা নকল ডিম্ব তথায় স্থাপিত করিয়া পাখীটাকে ছাড়িয়া দিয়া দেখিয়াছি যে, সে সেই জাল ডিম্বটিকে সবলে আঁকড়াইয়া ধরিয়া তদুপরি উপবেশন পূর্ব্বক তাহাতে তা দিতে থাকে।
  3. কাক এবং কোকিল উভয়েরই ডিম্বে পিঙ্গলবর্ণের আভা বিদ্যমান থাকিলেও, দেখিতে বায়সডিম্বটি ঈষৎ নীলবর্ণ এবং কোকিলের ডিম্ব সবুজ বর্ণ। কাকের ডিম অপেক্ষা কোকিলের ডিম আয়তনে যথেষ্ট ছোট। সাধারণতঃ উভয়ের ডিম্বে এই বর্ণবৈষম্য থাকিলেও প্রথম প্রথম পক্ষিতত্ত্বজ্ঞেরা একরূপ সাব্যস্ত করিয়াছিলেন যে, যে পক্ষীর কুলায়কে কোকিল আপনার ডিম্ব সংস্থাপনের উপযোগী মনে করে, সেই পক্ষীর ডিমের বর্ণের অনুরূপ ডিম প্রসবের ক্ষমতা তাহার আছে। এই ধারণা যে একেবারে ভ্রান্ত এবং সম্পূর্ণ অমুলক, তাহা আধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিকগণকর্ত্তৃক স্থিরীকৃত হইয়াছে। কোকিল পাখী কাক অপেক্ষা অধিকতর ক্ষুদ্রাবয়ব পক্ষীর নীড়েও সুবিধামত ডিম রাখিয়া অসে; বর্ণ বা আকার বৈষম্যে কিছু আসে যায় না, তাহা সে বেশ জানে।
  4. It is now proved up to the hilt that the female Cuckoo first lays her egg upon the ground, and carries it in her bill (not in her zygodactyle foot, as was for so long supposed) to the selected nest. * * Cuckoos have been shot carrying their own eggs in their bills.

    —W. Percival Westell’s
    The Young Ornithologist, p. 185.

  5. Birds of the Plains by Douglas Dewar, p. 116.
  6. ডিম্বপ্রসবের পরক্ষণ হইতে পাখী বিচারশক্তিহীন কলের পুতুলের ন্যায় কার্য্য করে, এই মতের পোষকতার প্রমাণস্বরূপ D. Dewar স্বেচ্ছায় কাকের সহিত কোকিলের খেলা খেলিয়াছেন। বিহঙ্গজাতির মধ্যে কাক যে অত্যন্ত বুদ্ধিশালী, তাহা বৈজ্ঞানিকগণ সাব্যস্ত করিয়াছেন। এই তীক্ষ্ণবুদ্ধি কাকের বুদ্ধির দৌড় কতদূর, তাহা পরখ করিবার নিমিত্ত কাকের বাসায় ডিম্বসদৃশ নানা দ্রব্য স্থাপন করিয়া, তাহার পরীক্ষার ফল এইরূপে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, “In all I have placed six Koel’s eggs in four different crow’s nests and......... in no single instance did the trick appear to be detected.” আর একটি কঠিন পরীক্ষার ফল তিনি এইরূপ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। একটি বৃহৎ মুরগীর ডিম্ব তিনি বায়সনীড়ে সংস্থাপন করিলেন। বায়সকে সর্ব্বসমেত এই বৃহৎ ডিম্বটি লইয়া ছয়টি ডিম্বের উপর তা দিতে হইয়াছিল। নিরুদ্বিগ্নচিত্তে বায়সপত্নী তা দিতে লাগিল। বৃহৎ ডিম্ব হইতে যখন বাচ্ছাটি বাহির হইল, তখন বায়সদম্পতির ক্রোধের সীমা রহিল না। Dewar লিখিতেছেন, “With angry squawks, the scandalised birds attacked the unfortunate chick, and so viciously did they peck at it that it was in a dying state by the time my climber reached the nest.” অতঃপর তিনি একটী golf-ball লইয়া অপর একটি নীড়ে স্থাপনপূর্ব্বক পর্য্যবেক্ষণ করিতে লাগিলেন যে বায়সস্ত্রী তাহার অপর ডিম্বগুলির সহিত golf-ballটিও তা দিতে লাগিল। কিন্তু আর এক স্থলে তাঁহার উক্তরূপ ফন্দী পাখিটি ধরিয়া ফেলিল এবং উহাতে তা দিতে রাজী হইল না।
    —Playing Cuckoo by D. Dewar, 
    (Birds of the Plains, pp. 111-115).
  7. Charles Dixon in Bird’s nests, p. 53.
  8. Alfred Newton in his Dictionary of Birds, p. 634 (Nidifiction).