পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
পাখীর কথা

এবং চরণ লোহিতবর্ণ তাহারা রাজহংস। উক্ত গ্রন্থে আমরা আরও দেখিতে পাই যে, হংসগণকে ‘মানসৌকস’ আখ্যা দেওয়া হইয়াছে,—“হংসাস্তু শ্বেতগরুতঃ চক্রাঙ্গা মানসৌকসঃ”, অর্থাৎ হংসগণ শ্বেতপক্ষ, চক্রাঙ্গ ও মানসসৱোররবাসী। পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, মিঃ মুর্‌ক্রফ্‌ট্ মানস-পর্য্যাটন-সময়ে grey goose পক্ষীকে সরোবরতটে গার্হস্থ্যব্যাপারে লিপ্ত থাকিতে দেখিয়াছেন; এমন কি, নিকটবর্ত্তী রাবণহ্রদেও[১] তিনি স্বচক্ষে ঐ জাতীয় পক্ষিগণকে অণ্ডপ্রসব এবং শাবক প্রতিপালনে ব্যাপৃত থাকিতে দেখিয়াছেন। বাস্তবিকই সহজে বুঝা যায় যে, হংসগণের কৈলাসপর্ব্বতে বা মানসসান্নিধ্যে যাইবার প্রয়োজন মুখ্যতঃ খাদ্যাভাবের আশঙ্কায় হইয়া থাকে বটে; সন্তানজনন ব্যাপারটিও ইহার অন্যতম কারণ। অমরকোষবর্ণিত রাজহংসের সহিত Grey goose এবং Flamingo এই উভয়জাতীয় হংসের বর্ণসাদৃশ্য রহিয়াছে। কালিদাসবর্ণিত হংসগুলির সহিতও ইহাদিগের খাদ্য এবং মানস-প্রয়াণ ব্যাপার লইয়া তুলনা করিলে যথেষ্ট সাম্য লক্ষিত হয়। তবে যখন কবিবর্ণিত প্রদেশসমূহে Grey goose পাখীগুলি কেবলমাত্র বসন্ত পর্য্যন্ত অবস্থান করে, গ্রীষ্মাগমে উড়িয়া যায়, তখন কেমন করিয়া আষাঢ় মাসে তাহারা মেঘদূতের সহযাত্রী হইতে পারে? এই সময় তাহারা মানসসরোবরে গার্হস্থ্যজীবন অতিবাহিত করিতেছে, ইহাই মিঃ মুর্‌ক্রফ্‌ট্ স্বচক্ষে দর্শন করিয়া লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। Flamingo জাতীয় হংসগুলিকে কিন্তু ভারতবর্ষে, বিশেষতঃ কবিবর্ণিত স্থানসমূহে জ্যৈষ্ঠমাসাবধি অবস্থান করিতে দেখা যায় বলিয়া মিঃ ব্লান্‌ফোর্ড লিখিয়া গিয়াছেন। আষাঢ় মাসেও ইহাদিগকে স্বল্প সংখ্যায় দেখিতে পাওয়া সম্ভব, কারণ, কোন এক বিশিষ্ট শ্রেণীর সকল যাযাবর পাখীই যে এক সময়ে প্রস্থান করে, তাহা

  1. A journey to Lake Manasarovara in Un-des by William Moorcroft, Asiatick Researches Vol. XII (1816), p. 473.