বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী
১৮১

রামকৃষ্ণের পুত্র বিশ্বনাথের প্রথম মহিষী রানী জয়মণি নাটোর হইতে বড়নগরে আসিয়া বাস করেন। বিশ্বনাথ কোন বৈষ্ণব গোস্বামীর পরামশে ইষ্টমন্ত্র পরিত্যাগ করিয়া বৈষ্ণবমন্ত্র গ্রহণ করিয়াছিলেন। রানী জয়মণিকে ইষ্টমন্ত্র পরিত্যাগ করিতে অনুরোধ করায়, তিনি তাহাতে অস্বীকৃত হইয়া, রানী ভবানীর নিকট উপস্থিত হন এবং তদবধি তিনি বরাবর বড়নগরেই বাস করিয়াছিলেন। ভবানী জয়মণিকে তাঁহার সমস্ত দেবোত্তর সম্পত্তি দানপত্রদ্বারা অপণ করিয়া যান। নাটোরবংশীয়ের৷ পূর্বে মধ্যে মধ্যে বড়নগরে আগমন করিতেন।

  এক্ষণে আমরা রানী ভবানীর বড়নগরস্থ পুণ্যকীতির উল্লেখ করিতেছি। তাঁহার সেই সমস্ত পুণ্যকীতি এক্ষণে সংস্কারাভাবে শ্রীহীন হইয়া উঠিয়াছে। বিশেষতঃ তাঁহার স্থাপিত ভবানীশ্বর শিবমন্দিরের দুর্দশা দেখিলে বড়ই ব্যথিত হইতে হয়। যিনি ভবানীর নামের পরিচয় দিতেছেন, তাহার প্রতি অযত্নপ্রদর্শন যে অতীব দুঃখের বিষয়, তাহাতে সন্দেহ নাই। এই ভবানীশ্বর মন্দির, বড়নগর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ মন্দির। ইহার ন্যায় গগনস্পশা ঁমন্দির বড়নগরে আর দ্বিতীয় নাই এবং বাঙ্গলার অন্য কোনস্থানে আছে কিনা সন্দেহ। ভবানীশ্বর মন্দির ভাগীরথীতাঁর হইতে কিছু পশ্চিমে অবস্থিত। কাশীধামেও রানী ভবানী ভবানীশ্বর নামে এক শিব প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। এইরূপ কথিত আছে যে, উভয় ভবানীশ্বর মন্দিরই এক সময়েই নিমিত হয়। বড়নগরের ভবানীশ্বর মন্দিরে যে-শিলালিপি ছিল, তাহার অন্তর্ধান ঘটিয়াছে; সুতরাং কোন অব্দে তাহ নিমিত হয়, বলিতে পারা যায় না। কাশীর ভবানীশ্বর মন্দিরে এইরূপ লিখিত আছে —

“বাণব্যাহতিরাগেন্দুসমিতে শকবৎসরে।”
নিবাসনগরে শ্রীমদ্বিশ্বনাথস্য সন্নিধোঁ॥
ধরামরেন্দ্রবারেন্দ্রগৌড়ভূমীন্দ্রভামিনী।
নির্মমে শ্রীভবানী শ্রীভবানীশ্বরমন্দিরম্॥”

 উক্ত শ্লোক হইতে কাশীর ভবানীশ্বর মন্দিরের নির্মাণকাল ১৬৭৫ শকাব্দ হইতেছে। যদি একসময়ে উভয় ভবানীশ্বর মন্দিরের নির্মাণ হইয়া থাকে, তাহা হইলে বড়নগরস্থ ভবানীশ্বর মন্দিরের নির্মাণাব্দও ১৬৭৫ শক হয়। খোদিত শিলাখণ্ড না থাকায়, ইহার প্রকৃত সময় নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। এই বৃহৎ মন্দিরের চতুঃপার্থে বারান্দ; বারান্দায় আটটি প্রবেশপথ আছে। ইহার নির্মাণকার্য অতীব প্রশংসনীয়। মন্দিরটি এক্ষণে অসংস্কৃত অবস্থায় বর্তমান। ভবানীশ্বর আজিও মন্দিরমধ্যে বিরাজ করিতেছেন। কিন্তু মন্দিরের চতুঃপার্থস্থ বারান্দায় পারাবতসকল বাস করিয়া অপরিষ্কৃত করিয়া রাখিয়াছে। ইহার প্রতি কোনই যত্ন লওয়া হয় না। ভবানীশ্বর মন্দিরের পশ্চিমে

 ৪ বাণ= ৫, ব্যাহতি=৭, রাগ=৬, ইন্দু = ১। অঙ্কের বামাগতি নিয়মানুসারে ১৬৭৫ শক হইতেছে।