পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/১৪

উইকিসংকলন থেকে

পরবর্ত্তী একচল্লিশখানা পত্র হেমন্তকুমার সরকারকে লিখিত

১৪
বৃহস্পতিবার
বৈকাল
19-6-14

 ট্রাম হইতে নামিয়া বুকটান করিয়া বাড়ীতে ঢুকিলাম। সত্যেন মামা ও একটি পরিচিত ভদ্রলোকের সঙ্গে বাহিরের ঘরে দেখা হয়। তারা একটু আশ্চর্য্য হইল। ভিতরে পিসা মহাশয় দাদা প্রভৃতির সঙ্গে দেখা হল। মার কাছে খবর গেল। অর্দ্ধেক পথে তাঁর সঙ্গে দেখা। প্রণাম করিলাম—তিনি দেখিয়া থাকিতে না পারিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। পরে এই মাত্র বলিলেন—“আমার মৃত্যুর জন্য তােমার জন্ম। আমি এতক্ষণ থাকিতাম না গঙ্গায় বাঁপ দিয়া মরিতাম কেবল পারি নাই মেয়েদের জন্য।” আমি মনে ২ হাসিতে লাগিলাম। তারপর বাবার সঙ্গে দেখা। তিনি ত প্রণামান্তে আলিঙ্গন করিয়া নিজের ঘরের দিকে লইয়া চলিলেন। অর্দ্ধেক পথে কাঁদিয়া ফেলিলেন এবং ঘরে অনেকক্ষণ আমাকে ধরিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। আলিঙ্গনাবদ্ধ হইয়া যখন কাঁদিতেছিলেন তখন আমার মনে হইতেছিল শুভ্রজ্যোৎস্না মধ্যবর্ত্তী সেই কচি মুখখানি যাহার জন্য সব ভুলিতে চেষ্টা করিয়াছি—কিন্তু শরীর মন পারে নাই। তারপর তিনি শুইয়া পড়িলেন আমি ধীরে ২ পায়ে হাত বুলাইতে লাগিলাম—তখন তিনি বােধ হয় ব্রহ্মসুখ অনুভব করিতেছিলেন। তারপর কিছুক্ষণ ধরিয়া দুইজনে জিজ্ঞাসা করিলেন কোথায় গিয়াছিলাম। সমস্ত frankly বলিলাম—টাকার কথা বলিলাম। হরিপদের কথা তাহারা টের পাইয়াছে তােমার কথা তাঁদের কাছে বলিবার আবশ্যক হয় নাই তাই বলি নাই—মামা জিজ্ঞাসা করাতে বলিয়াছি। তাহাতে কোন ক্ষতি নাই। কেবল বলিলেন একখানা চিঠি দাও নাই কেন।

 নানা স্থানে টেলিগ্রাম ও খোঁজ করা হইয়াছিল। মা active ছিলেন বাবা passive কতকটা যা হয় হবে। পুলিশে খোঁজ করান হয় না, একজন পুলিশ কর্ম্মচারী relative বারণ করিয়াছিলেন। মা পাগল প্রায়—আমি বাড়ী ছাড়িয়া যাইব—তাই অগত্যা এক মামা (আমেরিকা প্রত্যাগত) চলিলেন আমার অনুসন্ধানে—বৈদ্যনাথ ও দেওঘরে পাহাড়ে সব খোঁজ করিয়া একখানি পত্র দিয়াছেন—আজ পঁহুছিয়াছে—তাহার মর্ম্ম শুনিয়াছি। বালানন্দের কাছে গিয়াছেন। আর একজন ব্রহ্মচারী বলিলেন। “যদি উপযুক্ত না হইয়া গিয়া থাকে তবে ধাক্কা খাইয়া ফিরিবে। না হয় ফেরাইবার চেষ্টা বৃথা।”

 বেলুড় খোঁজ করা হইয়াছিল—হরিদ্বার Ramkrishna Mission-a wire করা হইয়াছিল—negative reply। Howrah-র একজন গণৎকারের কাছে যাওয়া হইয়াছিল—তিনি বলেন, ফিরিয়া আসিবে ১৯।২০ দিনের ভিতরে—ভাল আছে—একলা নাই—সঙ্গে দুজন আছে—উত্তর পশ্চিমে ‘ব’ দিয়া কোন স্থানে আছে—তখন বোধ হয় বারাণসীতে। তিনি আরও বলেন Contrary influence-এর জন্য সে সন্ন্যাসী হইতে পারিবে না— সংসারী হইবে। তাঁর মাথায় লাঠি। তিনি কচুপোড়া জানেন।

 সকলের মধ্যে রণেন মাতুল খুব favourable. সত্যেন বলেন most obdt হও—তার জীবনের ideal যেন তাই। আর বিশেষ কেউ বলে নাই।

 এক ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় ছিল। তিনি বেশ reasonable. তিনি বলেন boldly বলে কয়ে—talk the matter over and then be a Sannyasin কে তোমার পথে বাধা দিতে পারে?

 দুপুরে ফের বাবার সঙ্গে অনেক কথা হয়। নানা মত লইয়া— সন্ন্যাসী দর্শন সম্বন্ধে এবং ভ্রমণের সম্বন্ধে। বলিলাম কাহাকেও পছন্দ হইল না। তার সঙ্গে ২ আমার ideal-টা বলিলাম। সমস্ত discussion-এ what he wanted to drive at was—(১) সংসারে থেকে ধর্ম্ম হয় কিনা, (২) ত্যাগের জন্য Preparation দরকার—(৩) কর্ত্তব্য ত্যাগটা কি ঠিক—আমি বলিলাম—(১) সকলের পক্ষে এক ঔষধ নয় কারণ সকলের এক রোগ, এক সামর্থ্য নয় —(২) সংস্কারের উপর ত্যাগটা অনেক নির্ভর করে—সকলের জন্য বেশী ঘসা মাজা প্রয়োজন না হইতে পারে। (৩) কর্ত্তব্যটা relative—higher call এলে lower calls ভেসে যায়—জ্ঞান এলে কর্ম্মনাশ হয়।

 জিজ্ঞাসা করিলেন—অদ্বৈতজ্ঞান “ব্রহ্ম সত্য জগন্মিথ্যা” একটি Theory কিনা—বলিলাম যতক্ষণ মুখে বলছি ততক্ষণ Theory কিন্তু realise করিলে সত্য এবং realise করা যায়। যাহারা একথা বলে গেছেন তাঁহারা realise করেছিলেন এবং বলে গেছেন আমরা realise করিতে পারি। জিজ্ঞাসা করিলেন “কারা করেছিলেন এবং প্রমাণ কি?” বলিলাম —“ঋষিরা” প্রমাণ “বেদাহমিতি” এই বলিয়া শ্লোকটা quote করিলাম। তারপর বলিলেন “এক সময়ে কলিকাতায় মহর্ষি দেবেন্দ্র, কেশবচন্দ্র ও পরমহংসদেব ছিলেন—যে যে রকম পেরেছিলেন সেই রকম হয়েছিলেন।” আমি বলিলাম বিবেকানন্দের ideal হচ্ছে আমার ideal।

 শেষে বলিলেন আচ্ছা যখন তোমার higher call আসিবে তখন আমরা দেখিব। আমি এতদিন বাবাকে actively oppose করি নাই—Passively I have won the victory. এখন তিনি জোর করিয়া আমাকে কিছু বলিতে পাবেন না। এবং next time চলিয়া গেলে বোধ হয় আর ফিরাইবার চেষ্টা ও সঙ্কল্প ত্যাগ করিবেন।

 যাহা হউক আসাতে ভাল হইয়াছে এখন দেখিতেছি!

 মা fanatic, বলেন—আর যদি ও যায় আমি আর থাকিব না— সঙ্গে ২ যাইব আর বাড়ীতে ফিরিব না। তাঁকে বুঝিবার চেষ্টা সফল হইবে না বলিয়া বোধ হয়। বাবাকে দেখিলাম খুব reasonable.

 বেশ ভাল আছি। তুমি কেমন আছ লিখিবে।

 তোমার—

বেণীবাবুর বিষয় সকলের ভাল ধারণা—এবং তাহাকে শ্রদ্ধা করেন। বেণীবাবু বেশী কিছু বলেন নাই—সন্ন্যাসীর কথা বলিয়াছেন এবং আমার কৃচ্ছসাধনে তোমাকে মোটেই জড়িত করেন নাই। এখানে আবার মানুষটাকে জানা যায়।