গান। আহা ঐ গানটী তিনি গাইতেন, আমি গানটী জানি।” বলিতে বলিতে সুশীলার অশ্রু বহিতে লাগিল। থাকিয়া থাকিয়া তিনি আবার বলিলেন “আহা ঐ গানটী এক দিন আমাকে গাওয়াবার জন্য তিনি কতই সাধ্যসাধনা করেছিলেন। আজ কনক ও গানটা কে গাচ্চে, ও গলা কার?”
সুশীল সেই স্বর চিনিবার জন্য মনোযোগ পূর্ব্বক কিছুক্ষণ মৌন হইয়া রহিলেন, পরে মাথা নাড়িয়া বলিলেন—
“না—না চিনতে পারলুম না। তাঁকে চিনেছি, কিন্তু কনক ও গান কে গাচ্ছে? তাকে ত চিনতে পারছি নে?”
কনক সুশীলার কথায় কাঁদিতেছিল, অশ্রুজল মুছিয়া বলিল “আমি কই কিছুই শুনতে পাচ্ছিনে ত?”
সু। শুনতে পাচ্ছিস নে? ভাল করে শোন্। কনক কি সুন্দর গলা!
এই সময় চিকিৎসক আসিলেন। সমস্ত লক্ষণ দেখিয়া অত্যন্ত বিমর্ষ হইলেন, বুঝিলেন আশা বড়ই কম। সত্বর ঔষধ ব্যবস্থা করিতে তিনি বাহিরে গেলেন। চিকিৎসক চলিয়া গেলে সুশীলা বিস্ময় দৃষ্টিতে কনককে জিজ্ঞাসা করিলেন “ও কে? কেন এসেছে?” কনক উত্তর না দিতে দিতে সুশীলা আবার বলিতেন “কনক, ঐ শোন ঐ শোন।”
আর ত রহে না আঁখি, মুদে আসে পাতা,
আসিছে অনন্ত নিদ্রা এখনো সে কোথা?
এখনো এল না সখি, সেই কোলে মাথা রাখি
এ জীবনে তবে আর ঘুমান হলো না,
কাঁদিতে কাঁদিতে ওরে চলিনু জন্মের তরে
অভাগীর শেষ দিনে শেষ সাধও পূরিল না!