বালিকা চীৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠিল। শয্যা হইতে উঠিয়া হিরণের পদ গ্রহণ করিয়া বলিল,
“দেব, আমি তোমার পূজা করব, আমাকে বর দাও, আমার হিরণ কোথা?”
হিরণকুমার তাহাকে উঠাইয়া রোদন করিতে করিতে বলিলেন,
“কনক, আমি যে তোমার হিরণ, কনক আমার, তুমি উন্মাদিনী!”
কনক বলিল, “তুমি দেবতা, তুমিও কাঁদ, সকলেই কি কাঁদে, তবে আমিও কাঁদি।” বালিকা হিরণের কণ্ঠলগ্ন হইয়া কাঁদিতে লাগিল। হিরণ তাহাকে শোয়াইবার জন্য হাত ধরিয়া বিছানায় বসাইয়া বলিলেন, “কনক, শোও দেখি।”
নিদ্রায় শান্তি পাইয়া যদি কনকের জ্ঞান জন্মে, সেইজন্য তাহাকে ঘুম পাড়াইতে হিরণ ব্যস্ত হইলেন।
কনক বলিল, “তুমি বসে থাকবে, আমি শোব কেন? তুমি দেবতা, তুমি আগে শোও।”
হিরণ নিরুপায় হইয়া বলিলেন, “তুমি না শুলে দেবতা রাগ করবে, তোমার কি ভয় হচ্ছে না।”
“রাগ করবে? তবে আমি পালাই।” বলিয়া বালিকা আপনার আর্দ্র চুল লইয়া খেলিতে খেলিতে গুণ গুণ করিয়া গাহিয়া গাহিয়া, বিছানা হইতে উঠিল। হিরণ বিপদে পড়িয়া বলিলেন “না, না, রাগ করব না, তুমি শোও দেখি।” বালিকা তাঁহার কথা না শুনিয়া আপন মনে হাসিয়া উঠিয়া উল্লাসে করতালি দিয়া বলিল,
“মনে পড়েছে, মনে পড়েছে, সেই সুর! তোমার সেতার কৈ? বাজাও আমি গাই,
ধরি সুর তানে মরমের গানে,
অবাধে, লো সই, গাহিব আজ;