পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বন্দনা
নমি সত্য সনাতন নিত্য ধনে,
নমি ভক্তিভরে নমি কায়মনে।
নমি বিশ্বচরাচর লোকপতে
নমি সর্বজনাশ্রয় সর্বগতে।
নমি সৃষ্টি-বিধারণ শক্তিধরে,
নমি প্রাণপ্রবাহিত জীব জড়ে।
তব জ্যোতিবিভাসিত বিশ্বপটে
মহাশূন্যতলে তব নাম রটে।
কত সিন্ধুতরঙ্গিত ছন্দ ভরে
কত স্তব্ধ হিমাচল ধ্যান করে।
কত সৌরভ সঞ্চিত পুষ্পদলে
কত সূর্য বিলুণ্ঠিত পাদতলে।
কত বন্দনঝঙ্কৃত ভক্তচিতে
নমি বিশ্ব বরাভয় মৃত্যুজিতে।

সন্দেশ-বৈশাখ, ১৩২১


কানে খাটো বংশীধর
কানে খাটো বংশীধর যায় মামাবাড়ি,
গুনগুন গান গায় আর নাড়ে দাড়ি॥
চলেছে সে একমনে ভাবে ভরপুর,
সহসা বাজিল কানে সুমধুর সুর॥
বংশীধর বলে, “আহা, না জানি কি পাখি
সুদুরে মধুর গায় আড়ালেতে থাকি॥
দেখ, দেখ সুরে তার কত বাহাদুরি,
কালোয়াতি গলা যেন খেলে কারিকুরি॥”
এদিকে বেড়াল ভাবে, “এযে বড় দায়,
প্রাণ যদি থাকে তবে ল্যাজখানি যায়॥
গলা ছেড়ে এত চেঁচামেচি এত করি হায়
তব যে ছাড়ে না বেটা, কি করি উপায়॥
আর তো চলে না সহা এত বাড়াবাড়ি,
যা থাকে কপালে, দেই এক থাবা মারি॥”
বংশীধর ভাবে, “একি! বেসুরা যে করে,
গলা গেছে ভেঙে তাই “ফ্যাঁস্‌” সুর ধরে॥”
হেনকালে বেরসিক বেড়ালের চাঁটি,
একেবারে সব গান করে দিল মাটি।

সন্দেশ: কার্তিক, ১৩২৩


বর্ষশেষ
শুন রে আজব কথা, শুন বলি ভাইরে-
বছরের আয়ু দেখ বেশিদিন নাই রে।
ফেলে দিয়ে পুরাতন জীর্ণ এ খোলসে
নূতন বরষ আসে, কোথা হতে বল সে!
কবে যে দিয়েছে চাবি জগতের যন্ত্রে,
সেই দমে আজও চলে না জানি কি মন্ত্রে!
পাকে পাকে দিনরাত ফিরে আসে বার বার,
ফিরে আসে মাস ঋতু- এ কেমন কারবার।
কোথা আসে কোথা যায় নাহি কোন উদ্দেশ,
হেসে খেলে ভেসে যায় কত দূর দূর দেশ।
রবি যায় শশী যায় গ্রহ তারা সব যায়,
বিনা কাঁটা কম্পাসে বিনা কল কব্জায়।
ঘুরপাকে ঘুরে চলে, চলে কত ছন্দে,
তালে তালে হেলে দুলে চলে রে আনন্দে।

সন্দেশ-চৈত্র, ১৩২৩




বিবিধ কবিতা ৪১৫