বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩১৩
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
৩১৩

জাতিস্মর তদন্ত ১: দোলনচাঁপা ৩১৩ ছিল এবং মাথা ব্যথার একটা অসুখে মারা যায় তা জানল কী করে? দোলনের মাথায় ব্যথা হতাে কেন? বাড়ির সামনের মন্দিরের হদিসই বা জানল কী করে? দোলনের মা ও বাবা কণিকাদেবী এবং মানিকবাবু আমাকে জানিয়েছিলেন, দোলনকে নিয়ে প্রথম বর্ধমান যাত্রার আগে তারা কোনও দিন বর্ধমান যাননি। অনাথবাবু অর্থাৎ বুল্টিদের পরিবারের কারুর সঙ্গেই মানিকবাবুদের পরিবারের পরিচয় ছিল না। অতএব কেউ যদি বলেন—দোলন কারও কাছ থেকে বুল্টির কথা শুনেছিল এবং বুল্টির কাহিনি তাকে গভীর ভাবে নাড়া দিয়েছিল। ফলে বুল্টির কথা ভাবতে ভাবতে মস্তিষ্ককোষের কাজকর্মে বিশৃঙ্খলতার জন্য দোলন নিজেকে বুল্টি বলে ভাবতে শুরু করেছিল। মনােবিজ্ঞানের এই যুক্তি দোলনের ক্ষেত্রে খাটে বলে মানিক মিত্রের বিশ্বাস। বুল্টি ও তার পরিবারের বিভিন্ন ঘটনা দোলনের শােনার সম্ভাবনা ছিল কিনা, এটাই দোলনের জাতিস্মরতার দাবির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। আমি এ-ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচটি পরিবারের নাম হাজির করছি যাঁরা দোলন ও বুল্টি উভয় পরিবারেরই পরিচিত। (১) নীলাচল সামন্ত। মানিক মিত্রের বন্ধু। বুল্টির ঠাকুরদার পরিচিত। (২) স্বপ্না সামন্ত নীলাচল সামন্তর স্ত্রী। স্বপ্নাদেবীর বােন বুল্টির আত্মীয়ার ন্ধু। (৩) শশাঙ্ক ঘােষ। মানিকবাবুর বন্ধু। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষক। দে পরিবারের বিষয়ে জানতেন। (৪) ডাঃ হেমাঙ্গ চক্রবর্তী। নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা। মানিকবাবুদের সঙ্গে হেমাঙ্গবাবুদের পারিবারিক সখ্যতা ছিল। হেমাঙ্গবাবু ছিলেন বুল্টির বাবার বন্ধু। হেমাঙ্গবাবুর ছেলে ছিল বুল্টির বন্ধু। দোলনেরও পরিচিত (৫) রাজেন্দ্র চক্রবর্তী। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মানিকবাবুর পারিবারিক বন্ধু। বুল্টিদের জানতেন।(৬) কানাই বন্দ্যোপাধ্যায়। মানিকবাবুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বর্ধমানের মানুষ। দে পরিবারের অনেক কিছুই জানতেন। | এঁদের মধ্যে কেউ কোনও দিন দোলনের উপস্থিতিতে বুল্টির বিষয়ে কোনও কিছুই বলেননি, এমন নিশ্চিত হওয়ার মতাে কোনও তথ্য আমার হাতে নেই। দোলনের মাথায় ব্যথা হওয়ার কারণের পেছনেও অপার্থিব কিছু নেই। কিছু মানুষ বিশেষ গঠন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এঁরা আবেগপ্রবণ, মস্তিষ্ককোষের সহনশীলতা এঁদের কম। বিশেষ আবেগপ্রবণতার জন্য অনেক সময় এঁরা নিজেদের অজান্তে স্বনির্দেশ পাঠিয়ে অন্যের ব্যথা নিজের শরীরে অনুভব করেন। মানসিক চিকিৎসকদের কাছে এই ধরনের বহু ঘটনার বিবরণ পাওয়া যাবে। দোলন অ আ ক খ থেকেই পড়াশুনাে শুরু করেছিল। দোলন বাস্তবিকই জাতিস্মর হলে তার পূর্বজন্মের অন্যান্য স্মৃতির মধ্যে লেখা-পড়ার স্মৃতিও উজ্জ্বল থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। একজন মানসিক বিশৃঙ্খলার জন্য নিজেকে অন্য কেউ ভেবে তার ব্যবহার অনুকরণ করতে পারে।