বার করার সিদ্ধান্ত হয়। এই অনিশ্চয়তার জন্যে বই প্রকাশে আরও বেশী বিলম্ব হয়ে গেল; ‘ছাড়পত্র’ প্রকাশের ব্যাপারে আমি গোড়া থেকে জড়িত ছিলাম বলেই এই বিলম্বের জন্য প্রকাশকদের পক্ষ থেকে পাঠকসমাজের কাছে ক্ষমা চাইছি।
‘ছাড়পত্রে’র কবিতাগুলি রচনার কালানুক্রমে সাজানো হয় নি। পর পর সাজানোর ব্যাপারে মোটামুটি ভারসাম্য ও ছন্দোবৈচিত্রের দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। তার ফলে প্রথম দিকে বহু নতুন ও শেষের দিকে বহু পুরানো কবিতাকে স্থান দিতে হয়েছে। ‘চারাগাছ’, ‘প্রার্থী’, ‘একটি মোরগের কাহিনী', ‘সিঁড়ি’, ‘সিগারেট' প্রভৃতি কবিতা সুকান্তর রোগশয্যায় লেখা; ‘ফসলের ডাক’, ‘কৃষকের গান’, ‘এই নবান্নে’, ‘আঠারো বছর বয়স’ প্রভৃতি কবিতা চার-পাঁচ বছর আগেকার লেখা—সুকান্তর বয়স তখন পনেরো ষোল। ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতি’, ‘প্রস্তুত’, ‘দুরাশার মৃত্যু’, সম্ভবত তারও আগের লেখা।
১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল—যুগসন্ধির এই পাঁচটা বছর ধরে ‘ছাড়পত্রে’র রচনাকাল। একদিকে মৃত্যুকীর্ণ যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষ, বন্যা আর মহামারী, অন্যদিকে জীবনপ্রতিষ্ঠার মৃত্যুপণ সংগ্রাম—জয়পরাজয় আর উত্থানপতনে, সুখদুঃখ আর আশানিরাশায় ঘেরা এই পাঁচটা বছর ‘ছাড়পত্রে’ উৎকীর্ণ হয়ে আছে। কোটি কোটি মানুষের বলিষ্ঠ আশা কবির কণ্ঠে নির্ভীক ঘোষণায় ফুটে উঠেছে।
—সুকান্ত নতুন যুগের সার্থক কবি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এমন একাত্মতা, সহজ কথা সোজাসুজি বলতে পারার এমন দুঃসাহসী ক্ষমতা লুকাস্তর সমসাময়িক আর কোন কবি দেখাতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ। বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হয়েও কবিত্বশক্তিতে সুকান্ত ছিল অগ্রগণ্যদের একজন। ইস্কুলের ছাত্র অবস্থায় দেশজোড়া এত বিরাট খ্যাতি বাংলার আর কোন কবির ভাগ্যেই বোধহয় জোটেনি। এই বয়সেই বিদেশে সুকান্তর একাধিক কবিতার অনুবাদ হয়েছে, তার কবিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সুকান্তর কবিতা যাঁরা পড়বেন, তাঁরা একথা স্বীকার করবেন যে, সুকান্তর কবিতা শুধুই বিরাট সম্ভাবনার ইঙ্গিত নয়, তাতে আছে মহৎ পরিণতির সুস্পষ্ট পদধ্বনি। ‘ছাড়পত্র’ তাই বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন পাবে।