পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
দেবীসিংহ
৩৪১

মনুষ্যে যাহা ভাবিয়া স্থির করিতে না পারে, দেবীসিংহের নিকট তাহা সহজেই উপস্থিত হয়। কাজেই অত্যাচারের যত প্রকার উপায় হইতে পারে, তাহার উদ্ভাবনী। শক্তি দিন দিন তত প্রকারের সৃষ্টি করিতে লাগিল। সেইজন্য পূর্ণিয়া মরুভূমিতে পরিণত হইয়া উঠে।

 দেবীসিংহ-কর্তৃক পূণিয়া কিরূপে শাসিত হইয়াছিল নিম্নলিখিত ঘটনা হইতে তাহ৷ বেশ বুঝা যায়। দেবীসিংহের পর কলিকাতা হইতে এক দল লোক পূণিয়ার ইজারা লইতে প্রস্তুত হয়। তাঁহারা আপনাদিগের ভবিষ্যৎ লাভালাভের বিষয় স্থির করিবার জন্য পূর্ণিয়ায় উপস্থিত হইয়া যাহা দেখিল, তাহাতে তাহাদের প্রাণ শুষ্ক হইয়া গেল। তাঁহারা স্বচক্ষে পূণিয়ার চারিদিকে হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখিয়া তথা হইতে দ্রুতবেগে পলায়ন করিল, এবং আপনাদিগের নির্বুদ্ধিতার জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দণ্ড প্রদান করিয়া, ইজারা গ্রহণ হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিল। এইরূপে দেবীসিংহের ভীষণ অত্যাচারে যখন সমগ্র পূর্ণিয়া জনশূন্য হইবার উপক্রম হয়, তখন কর্তৃপক্ষীয়গণ ইহার প্রতিবিধানের জন্য যত্ন করিতে লাগিলেন। তাঁহারা সবিশেষ অনুসন্ধানে স্পষ্টই বুঝিতে পারিলেন যে, হৃদয়হীন দেবীসিংহের হস্তে আর পূণিয়ার ভার রাখা কদাচ সঙ্গত নহে।

 এই সময়ে হেস্টিংসসাহেব পর্যাটক-সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৭৭২ খ্রীঃ অব্দের সেপ্টেম্বর মাসে দেবীসিংহকে পদচ্যুত করিলেন এবং সরকারী বিবরণীতে তাহার ভীষণ অত্যাচারের কথা উল্লেখ করিয়া সাধারণকে অবগত করাইলেন। কিন্তু হায়! এই হেস্টিংসসাহেবও ক্রমে ক্রমে কিরূপে দেবীসিংহের বশীভূত হইয়া পড়িয়াছিলেন, তাহাও পরে জানিতে পারা যাইবে।

 যদি হেস্টিংসসাহেব প্রকাশ্যভাবে দেবীসিংহকে পূণিয়া হইতে বিতাড়িত করিতে বাধ্য হন, তথাপি তিনি মনে মনে দেবীসিংহের প্রতি তাদৃশ বিরক্ত ছিলেন না। দেবীও জানিতেন যে, হেস্টিংস তাহার উপর সহজে অসন্তুষ্ট হইবার লোক নহেন। চতুরে চতুরে তলে তলে বিলক্ষণ প্রণয় ছিল। দেবীসিংহের নাম ও যশে কলঙ্ক পড়িয়াছিল বটে, কিন্তু তাহার সম্পত্তির এক কপর্দকও নষ্ট হয় নাই। সেই সম্পত্তিবলে তিনি বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে, হেস্টিসংকে অচিরকাল মধ্যেই করতলগত করিতে পারিবেন। তাহার ইচ্ছাও অবিলম্বে পূর্ণ হইল। হেস্টিংসকে বশীভূত করিয়া তিনি পুনর্বার পদপ্রার্থী হইলেন।

 ১৭৭৩ খ্রীস্টাব্দে প্রাদেশিক সমিতির গঠন আরম্ভ হইল। এই সময়ে মুর্শিদাবাদেও প্রাদেশিক সমিতি স্থাপিত হয়। মুর্শিদাবাদ বাঙ্গলার শেষ রাজধানী বলিয়া, এই প্রদেশকে অনেকটা বিস্তৃতভাবে গ্রহণ করা হইত। এমন কি, মুর্শিদাবাদ বিভাগই তৎকালে বাঙ্গলার সর্বপ্রধান বলিয়া কথিত ছিল। মুর্শিদাবাদ প্রাদেশিক সমিতির প্রতি অন্যান্য অনেক বিস্তৃত বহুজনপূর্ণ প্রদেশের ভারও অপিত হয়। সেই সমস্ত প্রদেশের মধ্যে রঙ্গপুর, ইদ্রাকপুর প্রভৃতিই প্রধান। এই বিস্তৃত ভূভাগ হইতে বার্ষিক