পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ।
২৩৯

বারিষ্টারিতে উত্তীর্ণ হইয়া দেশে ফিরিয়া আসিলেন। বারিষ্টারি কার্য্যে সুদক্ষ হইবার উপযুক্ত বিদ্যা বুদ্ধি তাঁর ছিল, ছিল না কেবল স্থিরচিত্ততা, তাঁহার মনের স্থিতি-স্থাপকতা শক্তি যেন অসীম ছিল। তিনি দুঃখের মধ্যে যখন পড়িতেন, তখন ভাবিতেন, আপনার প্রবৃত্তিকে সংযত করিয়া চলিবেন, কিন্তু স্বন্ধের জোয়ালটা একটু নামাইলেই নিজ মূর্ত্তি ধরিতেন, আবার সুখের আলোর পশ্চাতে ছুটতেন। দেশে যখন ফিরিয়া আসিলেন, তখন তাঁহার নাম সম্ভ‌্রম আছে, বন্ধুবান্ধব আছে, সাহায্য করিবার লোক আছে, যদি আপনাকে একটু সংযত করিয়া, নিজ কর্ত্তব্যে মন দিয়া বসিতেন, বারিষ্টারিতেই কিছু করিয়া উঠিতে পারিতেন। কিন্তু পাগলা কীটে তাঁহাকে সুস্থির বা সংযত হইতে দিল না। তিনি কয়েক বৎসর নানাস্থানে ঘুরিয়া নিজ অবস্থার উন্নতির জন্য বিফল চেষ্টা করিলেন। অবশেষে ১৮৭৩ সালের জুন মাসে নিতান্ত দৈন্যদশায় উপায়ান্তর না দেখিয়া, কলিকাতা আলিপুরের জেনারেল হস্পিটাল নামক হাসপাতালে আশ্রয় লইলেন। তাঁহার পত্নী হেনরিয়েটা তখন মৃত্যুশয্যায় শয়ানা! মধুসূদনের মৃত্যুর তিন দিন পূর্ব্বে হেনরিয়েটার মৃত্যু হইল। মৃত্যুশয্যাতে সমগ্র জীবনের ছবি মধুসূদনের স্মৃতিতে উদিত হইয়া তাঁহাকে অধীর করিয়াছিল। এরূপ শুনিতে পাওয়া যায় যে মৃত্যুর পূর্ব্বে তিনি কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডাকাইয়া তাঁহার নিকট খ্রীষ্টধর্ম্মে অবিচলিত বিশ্বাস স্বীকার পূর্ব্বক ও পরমেশ্বরের নিকট নিজ দুস্কৃতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিয়া দেহত্যাগ করেন। ১৮৭৩ সাল, ২৯ শে জুন রবিবার, তিনি ভবধাম পরিত্যাগ করেন।

 যে ১৮৫৬ হইতে ১৮৬১ সাল পর্য্যন্ত কালকে বঙ্গসমাজের মাহেন্দ্রক্ষণ বলিয়াছি, সেই কালের মধ্যে আর যে যে ঘটনা ঘটিয়াছিল এবং যে যে প্রতিভা: শালী ব্যক্তি দেখা দিয়াছিলেন, তাহাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পরে দিব। এক্ষণে এই কালের অন্তর্গত দুই একটা ঘটনা আনুষঙ্গিকরূপে উল্লেখ করা আবশ্যক বোধ হইতেছে। কাল আইন (Black Acts) এর আন্দোলনের উল্লেখ অগ্রেই করিয়াছি। সে আন্দোলন একবার উঠিয়া থামিয়াছিল মাত্র। ১৮৫৭ সালের প্রারম্ভে আবার সেই আন্দোলন উঠে। অনেক দিন হইতে ইংরাজ কর্ত্তৃপক্ষ, এবং হাইকোর্টের, জজগণ অনুভব করিয়া আসিতেছিলেন, যে মফস্বলবাসী ইংরাজদিগকে সম্পূর্ণরূপে কোম্পানির ফৌজদারি আদালতের অধীন না করিলে এদেশীয় গরীব প্রজাদিগের উপরে তাঁহাদের, দৌরাত্ম্য নিবারণ করিতে