বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেই রুগ্‌ণ বালকের বিবর্ণ শীর্ণ মুখ দেখিতেছেন। তিনি তাহাকে ভালোরূপে কম্বলে আবৃত করিয়া তাহার শয্যার পার্শ্বে বসিয়া তাহাকে নানাবিধ গল্প শুনাইতে লাগিলেন। সন্ধ্যা অতীত হইল, দূরে শৃগাল ডাকিয়া উঠিল। বালক গল্প শুনিতে শুনিতে রোগের কষ্ট ভুলিয়া ঘুমাইয়া পড়িল।

রাজা তাহার পার্শ্বের ঘরে আসিয়া শয়ন করিলেন। রাত্রে তাঁহার ঘুম হইল না। কেবল ধ্রুবকে মনে পড়িতে লাগিল। রাজা কহিলেন, ‘ধ্রুবকে হারাইয়া সকল বালককেই আমার ধ্রুব বলিয়া বোধ হয়।’ খানিক রাত্রে শুনিলেন, পাশের ঘরে ছেলেটি জাগিয়া উঠিয়া তাহার বাপকে জিজ্ঞাসা করিতেছে, “বাবা ও কী বাজে?”

বাপ কহিল, “বাঁশি বাজিতেছে।”

ছেলে। বাঁশি কেন বাজে?

বাপ। কাল যে পূজা বাপ আমার!

ছেলে। কাল পূজা? পূজার দিন আমাকে কিছু দেবে না?

বাপ। কী দেব বাবা?

ছেলে। আমাকে একটা রাঙা শাল দেবে না?

বাপ। আমি শাল কোথায় পাব? আমার যে কিছু নেই, মানিক আমার!

ছেলে। বাবা, তোমার কিছু নেই বাবা?

বাপ। কিছু নেই বাবা, কেবল তুমি আছ।

ভগ্নহৃদয় পিতার গভীর দীর্ঘনিশ্বাস পাশের ঘর হইতে শুনা গেল। ছেলে আর-কিছুই বলিল না। বোধ করি বাপকে জড়াইয়া ধরিয়া আবার ঘুমাইয়া পড়িল।

রাত্রি শেষ না হইতে হইতেই গোবিন্দমাণিক্য গৃহস্বামীর নিকট বিদায় না লইয়াই অশ্বারোহণে রামু শহরের অভিমুখে চলিয়া গেলেন। আহার করিলেন না, বিশ্রাম করিলেন না। পথের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র নদী