অন্নদামঙ্গল/রতির প্রতি দেববাণী
রতির প্রতি দৈববাণী।
অগ্নি কুণ্ড জ্বালি রতি সতী হৈতে চায়।
হইল আকাশবাণী শুনিবারে পায়॥
শুন রতি তনু ত্যাগ না কর এখন।
শুনহ উপায় কহি পাইবে মদন॥
দ্বাপরে হবেন হরি কৃষ্ণ অবতার।
কংস বধি করিবেন দ্বারকা বিহার॥
রুক্মিণীরে লইবেন বিবাহ করিয়া।
তাঁর গর্ভে এই কাম জনমিবে গিয়া॥
শম্বর দানব বড় হইবে দুর্জ্জন।
মদনের হাতে তার মৃত্যু নিয়োজন॥
দাসী হয়ে তুমি গিয়া থাক তার ধামে।
লুকাইয়া এই রূপ মায়াবতী নামে॥
কহিবেন শম্বরে নারদ তপোধন।
জন্মিল তোমার শত্রু কৃষ্ণের নন্দন॥
শুনিয়া শম্বর বড় মনে পাবে ভয়।
মায়া করি দ্বারকায় যাবে দুরাশয়॥
মোহনী বিদ্যায় সবে মোহিত করিবে।
হরিয়া লইয়া কামে সমুদ্রে ফেলিবে॥
মৎস্যে গিলিবেক তারে আহার বলিয়া।
না মরিবে কাম ভবিতব্যের লাগিয়া॥
সেই মৎস্য জালিয়া ধরিয়া লবে জালে।
ভেট লয়ে দিবেক শম্বর মহীপালে॥
কুটিবারে সেই মৎস্য দিবেক তোমারে।
তাহাতে পাইবে তুমি কৃষ্ণের কুমারে॥
পুত্রবৎ পালিবা আপন প্রাণনাথ।
মা বলে যদ্যপি তবে কর্ণে দিবে হাত॥
শেষে তারে সম্মোহন আদি পঞ্চ বাণ।
শিখাইয়া পরিচয় দিয়া দিও জ্ঞান॥
শম্বরে বধিয়া কাম দ্বারকায় যাবে।
কহিনু উপায় এইরূপে পতি পাবে॥
শুনি রতি সাত পাঁচ ভাবনা করিয়া।
নিবায় অনল কুণ্ড রোদন ত্যজিয়া॥
কামের উদ্দেশে চলে শম্বরের দেশ।
বেশ ভূষা রূপ ছাড়ি ধরি দাসীবেশ॥
শিবের বিবাহ সবে শুন ইতঃপর।
রচিলা ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর॥