বিষয়বস্তুতে চলুন

আখ্যানমঞ্জরী (দ্বিতীয় ভাগ)/কৃতজ্ঞতা ও অকুতোভয়তা

উইকিসংকলন থেকে

কৃতজ্ঞতা ও অকুতোভয়তা

আরবদিগের খলীফা[] হারূল উব বশীদের, জাফর্ বরমীকী নামে, বিলক্ষণ কার্য্যদক্ষ, সাতিশয ধর্ম্মপরায়ণ মন্ত্রী ছিলেন। কোনও কারণে কুপিত হইয়া, খলীফা তাঁহার প্রাণদণ্ড করেন, এবং এই ঘোষণা করিয়া দেন, যদি কেহ মন্ত্রীর গুণকীর্তন করে, তাহার প্রাণদণ্ড হইবে। কিন্তু, এক বৃদ্ধ আরব, সতত, সর্ব্বসমক্ষে, মুক্তকণ্ঠে, মন্ত্রীর গুণকীর্তন করিতেন। এই বিষয় খলীফার কর্ণগোচর হইল, তদীয় আদেশক্রমে, ঐ বৃদ্ধ আরব, তাঁহার সম্মুখে নত হইলেন। তখন খলীফা, সাতিশয় রোষপ্রদৰ্শন পূর্ব্বক, তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কো্ন সাহসে আমাব অজ্ঞালঙ্ঘন কবিতেছ?

 খলীফার এই কোপপূর্ণ জিজ্ঞাসাবাক্য শ্রবণে, কিঞ্চিস্মত্র ভীত না হইযা, বৃদ্ধ বিনীত বচনে বলিলেন, ধর্মাবতার, যদি আমি, প্রাণভয়ে, মৃত মন্ত্রীর গুণকীর্তনে বিরত হই, তাহা হইলে, আমায় উৎকট অকৃতজ্ঞতাপাপে লিপ্ত হইতে হ্য়। অকৃতজ্ঞ বলিয়া, লোকালয়ে পরিচিত হওয়া অপেক্ষা, প্রাণত্যাগ করা ভাল। আমি অতি দীন ও সহায়হীন ছিলাম। আমায়, অধিক দিন, সপরিবারে অনাহারে থাকিতে হইত। সৌভাগ্যক্রমে, তাঁহার কৃপাদৃষ্টি হওয়াতে, আমার দুঃখ দূর হইযাছে। এক্ষণে আমি বিলক্ষণ সঙ্গতিপন্ন এবং সর্ব্বত্র মান্য ও গণ্য হইয়াছি। এ সমস্তই সেই দয়াশীল মহাপুরুষের অনুগ্রহের ফল। তাঁহার দয়া ও অনুগ্রহ আমার হৃদয়ে, সর্বক্ষণ, বিলক্ষণ জাগরূক রহিয়াছে। এমন স্থলে, প্রাণদণ্ডভযে, তাঁহার গুণকীর্তনে বিরত হইলে, আমায় নিরতিশয় অধর্ম্মগ্রস্ত হইতে হইবে। অতএব ধর্ম্মাবতার, ইচ্ছা হয়, আমার প্রাণদণ্ড করুন, জীবিত থাকিয়া, আমি কোনও কারণে, তাঁহার গুণকীর্তনে বিরত হইতে পাবিব না। বৃদ্ধ আববের কৃতজ্ঞতা ও অকুতোভয়তার আতিশয্য দর্শনে, খলীফা যৎপরোনান্তি প্রীতিপ্রাপ্ত হইলেন, এবং সাতিশয় প্রসন্ন হইয়া, তাঁহাকে বহুমূল্য পুরস্কার দিলেন। তখন, সেই বৃদ্ধ আবাব বলিলেন, ধর্মাবতার, ববৰ্মীকীর অনুগ্রহই আমার এই অভাবনীয় সম্মানের একমাত্র কারণ।


  1. খলীফা- অধিপতি, যিনি সর্ব্ব বিষয়ে কর্ত্তৃত্ব করেন।