বিষয়বস্তুতে চলুন

আখ্যানমঞ্জরী (দ্বিতীয় ভাগ)/শঠতা ও দুরভিসন্ধির ফল

উইকিসংকলন থেকে

শঠতা ও দুরভিসন্ধির ফল

এক দীন কৃষিজীবী, টস্কানিব অধীশ্বর আলেগ্‌জাণ্ডারের নিকটে উপস্থিত হইল, এবং নিবেদন করিল, মহারাজ, আমি একদিন একটি মোহরের থলি পাইয়াছিলাম খুলিয়া দেখিলাম, উহার ভিতরে যাটিটি মোহর আছে। লোকমুখে শুনিতে পাইলাম, ঐ থলিটি ফ্রিয়ুলিনামক সওদাগরের, তিনি প্রচার করিয়া দিয়াছেন, যে ব্যক্তি, এই হারাণ থলি পাইয়া, তাঁহার নিকটে উপস্থিত করিবে, তিনি তাহাকে দশ মোহর পুরস্কার দিবেন। এই কথা শুনিয়া, আমি তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইলাম; এবং মোহরের থলিটী তাঁহার সম্মুখে রাখিয়া, অঙ্গীকৃত পুরস্কারের প্রার্থনা করিলাম। তিনি পুরস্কার না দিয়া, তিরস্কার করিয়া আমায় আপন আলয় হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিলেন। আমি এ বিষয়ে, আপনার নিকট, বিচারপ্রার্থনা করিতেছি।

 তদীয় অভিযোগ শ্রবণগোচর হইবামাত্র, তিনি এই আদেশপ্রদান করিলেন, ফ্রিয়ুলিকে অবিলম্বে আমার সম্মুখে উপস্থিত কর। সে সম্মুখে আনীত হইল। তিনি, সাতিশয় অসন্তোষপ্রদর্শন পূর্ব্বক, জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি; পুরস্কারদানের অঙ্গীকার করিযাছিলে কি না? আর যদি অঙ্গীকার করিয়া থাক, তবে পুরস্কার দিতে অসম্মত হইতেছ কেন? সে বলিল, হাঁ মহাবাজ, আমি পুরস্কাব দিব বলিয়া অঙ্গীকার করিয়াছিলাম, যথার্থ বটে; এবং পুরস্কার দিতেও অসম্মত ছিলাম না, কিন্তু বুঝিতে পারিলাম, কৃষক নিজেই আপনকার পুরস্কার করিয়াছে। মহারাজ, যখন আমি ঘোষণা করি, তখন ঐ থলিতে ষাটিটি মোহর আছে বলিয়া, আমার বোধ ছিল, বস্তুতঃ উহাতে সত্তরটি মোহর ছিল। দশটি মোহর কৃষক আত্মসাৎ করিয়াছে।

 সওদাগরের এই হেতুবাদ শ্রবণে, তিনি, তাহার দুরভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া, সমুচিত প্রতিফল দিবার নিমিত্ত কৃতসঙ্কল্প হইলেন, এবং সহাস্য মুখে জিজ্ঞাসা করিলেন, থলি পাইবার পূর্ব্বে, তোমার ওরূপ বোধ হইতেছিল কি না? তখন সওদাগর বলিলেন, না মহারাজ, থলিতে যে সত্তরটি মোহর ছিল, থলি পাইবার পূর্ব্বে, আমার সেরূপ বোধ হয় নাই। তখন তিনি বলিলেন, আমি এই কৃষকেব চরিত্রের বিষয়ে সবিশেষ সমস্ত অবগত হইয়াছি, অসৎ উপায়ে অর্থলাভ করিতে পারে, এ সেইরূপ প্রকৃতির লোক নহে। ও থলি পাইয়াছিল, তাহাতে যদি সত্তরটি মোহর থাকিত, তাহা হইলে, সত্তরটিই তোমার নিকটে উপস্থিত করিত। আমি স্পষ্ট বুঝিতে পারিলাম, এ বিষযে তোমাদের উভয়েরই ভুল হইয়াছে। ও যে থলি পাইয়াছে, তাহাতে ষাটিটি মোহর আছে, কিন্তু তোমার থলিতে সত্তরটি মোহর ছিল। অতএব, এ থলিটি তোমার নয়।

 এই বলিয়া, তিনি, সওদাগরের হস্ত হইতে সেই থলিটি লইয়া, কৃষকের হস্তে দিলেন, এবং বলিলেন, তোমার ভাগ্যবলে, তুমি এই থলিটি পাইয়াছ, ইহাতে যাহা আছে, তাই তোমার, তুমি স্বচ্ছন্দে ভোগ কর, যদি উত্তরকালে কেহ কখনও এই থলির দাবি করে, তুমি আমায় জানাইবে। এই থলি উপলক্ষে, যদি কেহ তোমায় ক্লেশ দিতে উদ্যত হয়, আমি তাহার প্রতিবিধান করিব। এই বলিয়া তিনি কৃষক ও সওদাগর, উভয়কে বিদায় করিলেন।