আমার খাতা/গীত

উইকিসংকলন থেকে

গীত।

বিভাস-দাদ‍‍রা।

আমি আপনা হারায়ে
তোমাতে মজিয়ে থাকিতে চাই
তব মধুবাণী দিবানিশি শুনি
তব পথ পানে চলিতে যাই,
পঙ্গুর বাসনা পর্ব্বত লঙ্ঘনে
মিটিবে কি সাধ ভাবিসদাই।

আশাবরী-একতালা।

দয়াময় নাম ভাবরে রটরে মন রসনা
অনায়াসে এড়াইবে এ ভব যন্ত্রণা
মিছে সংসারে মজে ভোগ এ লাঞ্ছনা
প্রাণ মন করি তাঁরে সমর্পণ
তাঁর কাজ করি চল না।

ইমন কল্যাণ—তেতালা।

হে অন্তরযামী
আমার অন্তর ব্যথা
অন্তরে রাখিব আমি
আমার এ হৃদয়ে নাথ।
রাজা হয়ে বস তুমি।
তোমার এ দীন প্রজা
তোমারে করিবে পূজা
ভক্তি প্রীতি অশ্রুধারা
ইহা ছাড়া আর কিছু
কোথা বল পাব আমি।

ইমন—তেওরা।

উষার আলোক ভূতল পরশি
বাঁধা হয়ে যায় প্রেমের পাশে,

দিনে দিনমণি নিশীথে চন্দ্রমা
হয়ে থাকো মোর হৃদয়াকাশে
মম আঁখিতারা দুটি, নীরবেতে ফুটি,
চেয়ে থাকে যেন তোমারি পানে,
দিবসে আমার হৃদয়পদ্ম
ফুটে উঠে যেন তোমারি আশে।

বাউলের সুর।

দোকানি দোকান তোল
ঘরে যাবার সময় হল
ভবে এসে যে ঘরেতে বাস
ভেঙ্গে গেছে সে বাসা
ওরে আসা যাওয়া সার হল।
ভবের হাটে বেচতে এসে
মূলে হাবাত হয়ে গেল
এখন নাম সম্বল করে ঘরে ফিরে চল।
এই দুনিয়া ফক্কিকারি
হায়রে মোরা নগদা মুটে

শুধু পঞ্চভূতের বেগার খেটে
মরতে হল।
এখন দিন থাকতে ঘরে চল
ঐ যে আঁধার হয়ে এল।

[১]

সাহানা—ঝাঁপতাল।

যে ফুল ফুটিয়াছিল নিরজন বনে
কেন তারে তুলে আন নিঠুর জনে।
যদি নাহি বাস ভাল,
তবে কেন পায়ে দল,
দয়া করে রেখে দিও গৃহের কোণে
স্বভাবে শুকাতে দিও আপন মনে।

[১]

বাগেশ্রী—আড়াঠেকা।

হরি করি কি এখন?
না মিলিল ভালবাসা।

না মিটিল কোন আশা
হৃদয় হয়েছে পুড়ে
মরুর মতন।
হরি তুমি দয়াময়,
এ বিধান কেন হয়,
একজন সুখে রয়
অন্যে কেন তারি তরে
করয়ে রোদন?
বহিতে পারি না আর
এ ছার জীবন ভার
বল নাথ তুমি বল
এ ছার জীবনে মম
কিবা প্রয়োজন?

ঝিঁঝিট—ঠুংরী।

দাও হে চরণ তরি
এ ভবসাগরে তরি
চলে যাই ভব পারাবার পারে।
পড়িয়ে সাগর মাঝে
করি হাহাকার,
কোথা ওহে দীনবন্ধু
কর হে উদ্ধার।

পিলু বারোঁয়া—পোস্তা।

রস বৈ তুমি পিতা
রসে পরিপূর্ণ ধরা।
সে রস করিলে পান
ক্ষুধা তৃষ্ণা অবসান
শান্তিময় হয় ধরা।

১০

বাগেশ্রী—আড়াঠেকা।

আশ্চর্য্য তোমারি কার্য্য,
বুঝা নাহি যায়,
কখন কর বা সৃষ্টি
কখন প্রলয়॥
কারে বা পাঠাও ভবে;
কারে বা ডাকিয়া লও;
বিচিত্র তোমার লীলা
তুমি লীলাময়।
দেহ শক্তি বুঝিবার,
তব প্রেম করুণার
নহিলে সে দহে মন;
শোকে অনিবার॥

১১

সিন্ধুভৈরবী—যৎ।

হরিহে ভরসা তোমার কে করে,
যে তোমায় ডাকে,—
তুমি দুঃখ দেও পাকে পাকে॥
আমি মরি বাঁচি আপনি আছি,
ডাকবনা আর তোমাকে॥

১২

বেহাগ—মধ্যমান।

নূতন বরষে নাথ—
প্রণাম করি তোমায়
ভক্তি পুষ্প অশ্রুবারি
প্রেমের চন্দন করি
এনেছি হৃদয় ভরি
দিতে হরি তব পায়।
দাওহে চরণে স্থান।
কর মোরে পরিত্রাণ
বিষয় বাসনা যেন
মনেতে না পায় স্থান॥

১৩

পিলু বারোয়া—ঠুরি।

বিপদেতে ভয় করনা
আমাব মন
কর অভয় পদ দরশন
যিনি আমার হৃদয় বিহারী
তিনি বিপদের কাণ্ডারী,
আসুক না কেন বিপদ ভারি
সোজা পথে চলে যাবে
আমার এ জীবন।

১৪

খাম্বাজ—চৌতাল।

এই বিশ্বমাঝে অপরূপ সাজে
সাজিয়াছে বিশ্বরাজা
তুমি অনলে অনিল, পৃথিবী সলিল
শূন্যে রবিশশি গ্রহতারা।
তুমি পত্র পুষ্প ফলে
রূপ নিরমলে হয়েছ উজ্জ্বল
তুমি জীব রূপে সুধা ধারা।

তুমি ভ্রাতা ও ভগিনী জনক জননী
পতি পত্নীরূপে প্রেমেতে হারা।
তুমি মা হয়ে কর সন্তানে কোলে
পুত্ররূপে ধর জননীর গাল
পিতা হয়ে কর সন্তানে স্নেহ
পুত্ররূপে পুন কর জন্মগ্রহণ।

১৫

খাম্বাজ—তেওরা।

এক ব্রহ্ম সর্ব্ব ঘটে,
ভেদ বুদ্ধি কেন ঘটে?
আমি আমি করি
মায়া ঘোরে ঘুরি,
আমিত্বের লয়
ব্রহ্মজ্ঞানোদয়
কিসে বল হয়!
চিদাকাশে ব্রহ্মজ্ঞান ভাসে
মায়ানাশে জ্ঞানোদ্বয়।

১৬

বেহাগ-তাল ফেরতা।

তিনি পঞ্চভূত পঞ্চের অতীত
ভ্রমাতীত শুদ্ধজ্ঞান।
ঐ যে চন্দ্রমা নিশিথে বিরাজে
তমোরাশি নাশি, আলোকেতে সাজি হাসিছে,
কোথা হতে তুমি পেয়েছ জ্যোতি?
সূর্য্য হতে তব রূপের উৎপত্তি!
ঐ যে সুরয গগন মণ্ডলে
এত তেজ তুমি কোথা হতে পেলে?
মৃতপ্রায় প্রাণী নিমিষে জাগালে,
ফুটাইলে কলি হরষ লহরী
তুলে দিলে প্রাণ সাগরে,
কে মূলেতে থাকি প্রকাশিছে ভাষা?
ব্যক্ত ও অব্যক্তরূপে
তিনি বিশ্বপ্রাণ বিশ্ব তাঁর প্রাণ—
জীবে ব্রহ্মে একাকার।

  1. ১.০ ১.১ বহুদিন পূর্ব্বে লাবণ্য নামে একটি গল্প লিখিয়াছিলাম কিন্তু অযত্নে তাহা কোথায় হারাইয়া গিয়াছে সেই উপন্যাসে আমার এই ষ্টার চিহ্ণিত গান কয়েটি ছিল এই খানে উদ্ধৃত করিলাম।