আমার খাতা/ধর্ম্ম

উইকিসংকলন থেকে

ধর্ম।

 আমাদের জ্ঞান নাই বলিয়া কি ধর্ম্মকেও পরিত্যাগ করিব? না, কখনই না! আসুক শত সহস্র বিপদ্, তাহা অক্লেশে অতিক্রম করিয়া যাইব। ধর্ম্মরূপ পর্ব্বতের গুহায় যে আশ্রয় লইয়াছে বাহিরের ভীষণ ঝটিকা তাহার কিছুই করিতে পারে না। আইস ভগ্নিগণ, আমরা সকলে মিলিয়া তাঁহার আশ্রয় গ্রহণ করি। তিনি আমাদিগকে পাপের হাত হইতে রক্ষা করিয়া অমৃতময় পরমেশ্বরের ক্রোড়ে লইয়া যাইবেন। আমরা সকলেই এক পরলোকের যাত্রী। এলোকে আমাদিগকে কোথাও যাইতে হইলে যেমন পাথেয় সংগ্রহ করিয়া তবে পথ চলিতে হয় সেইরূপ আমাদিগকে পরলোকের জন্য ধর্ম্ম-ধন সঞ্চয় করিতে হইবে। আমরা যদি প্রতিদিন একটি করিয়া পয়সা রাখি তবে এক বৎসরে ৫॥৶৫ হইয়া থাকে; আমাদের যতদিন জীবন আছে ততদিন যদি অল্প অল্প করিয়া ধর্ম্ম সঞ্চয় করি তবে কি মৃত্যুকালেও ৫॥৶৫ হইবে না? নিস্বম্বল যাওয়া অপেক্ষা তাহা কি ভাল নয়? আমার কিছু হইল না বলিয়া হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলার ন্যায় করিলে আর কি হইবে? আশায় বুক বাঁধিতে হইবে। ঈশ্বর ধর্ম্মরূপ হস্ত বাড়াইয়া পাপী তাপীকে ডাকিতেছেন, আমরা যদি মার হাত ধরি, মার ডাক্ শুনি তবে নির্ভয়ে এ দুর্গম পথ অতিক্রম করিতে পারিব, সংসারের কোলাহল হইতে একটু নির্জ্জনে যাইলে মার ডাক্ আরও স্পষ্ট শুনিতে পাইব, আজ হইতে আমরা প্রতিজ্ঞা করি যে আমরা ধর্ম্মকে পরিত্যাগ করিব না ও ধর্ম্মের আশ্রয় লইব। ঈশ্বর আমাদিগকে শুভ বুদ্ধি দিন তিনি আত্মাতে শান্তি, মনে আনন্দ, ক্ষুধায় অন্ন, পিপাসায় জল প্রদান করিতেছেন তাঁহার অপার দয়া ও করুণা স্মরণ করিয়া আমরা যেন প্রতিদিন তাঁহাকে কৃতজ্ঞতা জানাই; ধর্ম্মকে আমরা রক্ষা করি ধর্ম্ম আমাদের রক্ষা করুন।

 হে পরমাত্মন্! এই বিশাল জগতে অগণ্য গ্রহনক্ষত্র সকল নিয়ত ভ্রাম্যমান হইতেছে। সকলেই তোমার নিয়ম-রজ্জুতে বদ্ধ রহিয়াছে। কি জড় পদার্থ কি সচেতন পদার্থ সকলেই তোমার অধীন ও তোমার নিয়মে চালিত, কেহ কাহাকেও অতিক্রম করিতে পারে না। দেব! ধন্য তোমার রচনার কৌশল! ক্ষুদ্র জীব আমি, তোমার সৃষ্টির রহস্য কি বুঝিব, তোমাকেই বা কি করিয়া ধারণা করিব? তোমাকে জানিবার ক্ষমতা আমার নাই। বাক্য তোমায় বলিতে গিয়া পরাস্ত হয়, মন তোমায় মনন করিতে গিয়া নিবৃত্ত হয়। একমাত্র জ্ঞানের দ্বারাই তোমাকে জানা যায়। কিন্তু আমার সে জ্ঞান কোথায়? দয়াময়! তোমায় জানিনা, কিন্তু ক্ষুদ্র হৃদয়ে তোমায় পাইবার আশাটুকু সযত্নে পোষণ করিতেছি; এই আশাই আমাকে জীবিত রাখিযাছে। আমি সতত ভয়ে ভয়ে সারা হই পাছে আমার এই আশালতার মূলচ্ছেদন করিয়া ফেলি। আকিঞ্চন-সলিল সেচন করি পাছে শুষ্ক হইয়া যায়। আমার আর কি আছে? এই আশাকেই বক্ষে ধারণ করিয়া কত সন্তর্পণে জীবন-সংগ্রামে চলিতেছি। যখন জীবন-সংগ্রামে ক্লান্ত হইয়া পড়ি তখনই আশা আমাকে বলিয়া ওঠে—চল তিনি পাপীর বন্ধু, তুমি তাঁহাকে পাইবে। তখন আমার প্রাণে বল আসে। আশামাত্রেই কি সবশেষ হইবে? না অবশেষে তোমায় সত্য সত্যই পাইব? দয়াময়! কি বলিয়া তোমায় সম্বোধন করিলে আমার হৃদয় তৃপ্তিলাভ করিবে তাহা আমি জানিনা, এমন ভাষা খুঁজিয়া পাই না। দয়াময়! আমি মুর্খ, আমার বিদ্যা নাই, বুদ্ধি নাই, আমি শুনিয়াছি তোমায় উপলব্ধি করিবার জন্য বিদ্যা বুদ্ধির প্রয়োজন হয় না, তুমি কেবল মনুষ্যের ব্যাকুলতা দেখ। আমার হৃদয়কে তোমার জন্য ক্রন্দন করিতে শিখাও, আমার পাপ-কালীমা তোমার প্রেমনীরে বিধৌত করিয়া লও, আমার উপর তোমার করুণা বর্ষিত হউক। তুমি আমাদের আত্মার কল্যাণ বিধান কর, তুমি আমাদের হৃদয়ে প্রেমেররাজ্য স্থাপন কর, জগতে শান্তি স্থাপন কর, জগতে শান্তি স্থাপিত হউক, এই তোমার চরণে প্রার্থনা করি।

ওঁ শান্তি! শান্তি!