উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/মহাভারতের কথা/অষ্টাবক্র
মহর্ষি উদ্দালকের শ্বেতকেতু নামে একটি পুত্র, সুজাতা নামে একটি কন্যা, আর কহোড় নামে একটি শিষ্য ছিলেন। শুরুর প্রতি কহোড়ের বড়ই ভক্তি, এবং তাঁহার সেবায় যার পর নাই যত্ন ছিল। তাহাতে উদ্দালক অতিশয় তুষ্ট হইয়া, তাঁহাকে সকল বিদ্যা প্রদানপূর্বক সুজাতার সহিত তাঁহার বিবাহ দিলেন।
কহোড়ের যে পুত্র হইল, সে বড়ই আশ্চর্য লোক। জন্মিবার পূর্বেই সে তাহার পিতার ভুল ধরিয়াছিল। একদিন সে কহোড়কে বলিল, ‘বাবা, তুমি সকল রাত জাগিয়া পড়, কিন্তু তোমার পড়া ঠিক হয় না।’ সে সময়ে কহোড়ের শিষ্যগণ সেইখানে উপস্থিত থাকায়, সেই শিশুর কথায় তাঁহার নিতান্তই লজ্জাবোধ হইল। সুতরাং তিনি শিশুটিকে এই বলিয়া শাপ দিলেন, ‘যেহেতু তুমি আমার এইরূপ অপমান করিলে, অতএব তোমার শরীরের আটটি স্থান বাঁকা হইবে!’
পিতার শাপে ছেলেটি এইরূপ বাঁকা হইয়া জন্মগ্রহণ করাতে, তাঁহার ‘অষ্টাবক্র’ নাম রাখা হয়। জন্মের পর অষ্টাবক্র তাঁরা পিতাকে দেখিতে পান নাই, কারণ তাহার পূর্বেই কহোড়ের মৃত্যু হইয়াছিল।
কহোড় অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন বলিয়া, সুজাতার নানারূপ ক্লেশ হইত। ইহাতে কহোড় দুঃখিত হইয়া মিথিলার রাজা জনকের নিকট কিছু টাকা ভিক্ষা করিতে গেলেন। জনকের সভায় বন্দী নামক বড়ই ভয়ানক রকমের একজন পণ্ডিত ছিলেন। জনকের নিকট কেহ কিছু চাহিতে গেলে, আগে এই বন্দীর সহিত তর্ক না করিয়া, সে রাজার সহিত দেখা করিতে পাইত না। তর্কের নিয়ম এই ছিল যে, ‘যে হারিবে তাহাকেই জলে ডুবাইয়া দেওয়া হইবে।’ লোকটি এমনি অসম্ভব রকমের ঠ্যাটা যে কি বলিব! কাহারো সাধ্য ছিল না যে, তাঁহাকে তর্কে হারায়। কাজেই এ পর্যন্ত যতলোক আসিয়াছে, তাঁহার হাতে পড়িয়া সকলেই মারা গিয়াছে। বেচারা কহোড়ের টাকা ভিক্ষা করিতে আসিয়া সেই দশাই হইল।
এ ঘটনার কথা অষ্টাবক্রকে জানিতে দেওয়া হয় নাই। তিনি মনে করিতেন, উদ্দালক তাঁহার পিতা আর শ্বেতকেতু তাঁহার ভাই। শ্বেতকেতু আর অষ্টাবক্র প্রায় এক বয়সী ছিলেন। তাই তাঁহাদের খেলান বেড়ান সকলই এক সঙ্গে হইত। মাঝে মাঝে ঝগড়াও যে না হইত, এমন নহে।
এমনি করিয়া বার বৎসর কাটিয়া গেল। ইহার মধ্যে একদিন অষ্টাবক্র উদ্দালকের কোলে বসিয়াছিলেন, তাহাতে শেতকেতুর হিংসা হওয়াতে, তিনি আসিয়া তাঁহার হাত ধরিয়া টানাটানি করিতে লাগিলেন। ইহাতে অষ্টাবক্র কাঁদিতে আরম্ভ করিলে, শ্বেতকেতু বলিলেন, ‘উহা ত তোমার পিতার কোল নহে, তুমি কেন ওখানে বসিবে?’
এ কথায় অষ্টাবক্র নিতান্ত দুঃখিত হইয়া নিজের মাতার নিকট আসিয়া জিজ্ঞাসা কবিলেন, ‘মা, আমার বাবা কোথায়?’
তখন সুজাতা আর কি করেন? কাঁদিতে কাঁদিতে অষ্টাবক্রকে তাঁহার পিতার মৃত্যুর কথা শুনাইলেন। সে সংবাদ শুনিয়া অষ্টাবক্র তখন কিছু বলিলেন না, কিন্তু রাত্রিতে শ্বেতকেতুর সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁহার অনেক পরামর্শ হইল।
অষ্টাবক্র শ্বেতকেতুকে বলিলেন, “চল, আমবা কাল মিথিলায় যাই।”
শ্বেতকেতু আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “মিথিলায় যাইব কেন? সেখানে কি আছে?”
অষ্টাবক্র বলিলেন, ‘সেখানে জনক রাজা যজ্ঞ করিতেছেন, তাহাতে পৃথিবীর যত মুনি ঋষি আর ব্রাহ্মণ পণ্ডিত সকালেই আসিয়াছেন। ইঁহাদের মধ্যে তর্ক উপস্থিত হইলে, দেখিতে বড়ই চমৎকার হইবে। সেখানে গেলে আমরা সেই তর্কের তামাশাও দেখিতে পাইব, বেদগানও শুনিতে পাইব, আর তাহার উপরে বিস্তর টাকাকড়ি লইয়া ঘরে ফিরতে পারিব।’
তখন শ্বেতকেতু উৎসাহের সহিত বলিলেন, ‘তবে চল যাই।’
পরদিন ভোরে উঠিয়া দুইজনে মিথিলায় যাত্রা করিলেন। পথের শোভা দেখিয়া আর যজ্ঞের কথা কহিয়া মনের আনন্দে তাঁহাদের সময় কাটিয়া গেল, সুতরাং মিথিলায় উপস্থিত হইতে তাঁহাদের কোন কষ্টই হইল না। সে সময়ে স্বয়ং মহারাজা জনক রাজপথ দিয়া যজ্ঞস্থানে যাইতেছিলেন, রাজার সিপাহীরা দূর হইতে চিৎকার পূর্বক লোক সরাইয়া পথ পরিষ্কার রাখিতেছিল। অষ্টাবক্র আর শ্বেতকেতুকেও তাহারা সরিয়া যাইতে বলিল। কিন্তু অষ্টাবক্র তাহাদের কথায় কান না দিয়া বলিলেন, “মহারাজ! পথের মধ্যে যতক্ষণ ব্রাহ্মণ আসিয়া উপস্থিত না হন, ততক্ষণ সকলের আগে অন্ধ, তারপর বধির, তারপর স্ত্রীলোক, তারপর মোট মাথায় মুটে, তারপর রাজা পথ পাইবেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ আসিলে সকলের আগে তাঁহাকে পথ ছাড়িয়া দিতে হইবে। সুতরাং আমাদিগকে তাড়াইয়া দিয়া আপনার যাওয়া কেমন হয়?’
ইহাতে জনক আশ্চর্য এবং সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, ‘ইনি যথার্থই কহিয়াছেন, ব্রাহ্মণ শিশু হইলেও সম্মানের পাত্র। শীঘ্র ইঁহাদিগকে পথ ছাড়িয়া দাও।’
অষ্টাবক্র আবার বলিলেন, ‘মহারাজ, আমরা বড় সাধ করিয়া আপনার যজ্ঞ দেখিতে আসিয়াছি, আর আপনার ঐ দরোয়ান বেটা আমাদিগকে ঢুকিতে দিতেছে না, ইহাতে আমাদের অত্যন্ত রাগ হইয়াছে। অনুগ্রহ করিয়া উহাকে দ্বার ছাড়িয়া দিতে বলুন।’
তখন দরোয়ান বলিল, “ঠাকুর, আমাদের দোষ নাই, আমরা বন্দীর হুকুমে কাজ করি। তিনি বৃদ্ধ পণ্ডিত ব্রাহ্মণদিগকেই ঢুকিতে দিতে বলিয়াছেন, ছেলেপিলেকে ঢুকিতে দিতে নিষেধ করিয়াছেন।’
অষ্টাবক্র বলিলেন, ‘পণ্ডিতকে যে ঢুকিতে দাও, সে ত খুব ভাল কথা। কিন্তু খালি কি বুড়া হইলেই পণ্ডিত হয়, আর চুল দাড়ি সাদা না হইলে আর দাঁত সবগুলি পড়িয়া না গেলে পণ্ডিত হয় না? আমরা যে পণ্ডিত নহি, তাহা তুমি কি করিয়া বুঝিলে?
দরজায়ান বলিল, “ঠাকুর, তোমার যতখানি বয়স হইয়াছে, লেখাপড়া শিখিতে তাঁহার চেয়ে ঢের বেশি সময় লাগে। ছেলেমানুষ আসিয়া বুড়ার মত কথা কহিলেই কি সে পণ্ডিত হইয়া যায়?
অষ্টাবক্র বলিলেন, “আচ্ছা বাপু। তুমি নাহয় মহারাজকেই জিজ্ঞাসা করিয়া দেখ না। আজ আমরা সভায় গিয়া যখন তর্কের চোটে তোমাদের বন্দী মহাশয়ের ধন্ধ লাগাইয়া দিব, তখন বুঝিবে কে বেশি পণ্ডিত।”
দারোয়ান বলিল, “তোমরা ছেলেমানুষ তোমাদিগকে অমনি কি করিয়া ঢুকিতে দিই? একটু অপেক্ষা কর, দেখি কৌশলে ঢুকাইতে পারি কি না। নাহয়, তোমরাও একটু চেষ্টা কর।”
তখন অষ্টাবক্র আবার রাজাকে বলিলেন, “মহারাজ, শুনিয়াছি আপনার বন্দী নাকি বড়ই পণ্ডিত, সে সকলকে তর্কে হারাইয়া জলে ডুবাইয়া মারে। আপনার লোকটি কোথায়? আমি তাহাকে একটিবার দেখিতে চাহি। আপনারা দেখুন, আজ আমি তাহাকে জলে ডুবাইতে পারি কি না।”
রাজা বলিলেন, “ঠাকুর, তুমি বন্দীর কথা ভাল করিয়া জান না। তাই ওরূপ কহিতেছ। বড় বড় পণ্ডিতেরা তাঁহার নিকট হারিয়া গিয়াছেন, তাঁহাকে কেহই হারাইতে পারেন নাই।”
অষ্টাবক্র বলিলেন, “মহারাজের কথায় স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে যে, বন্দী আমার মত লোকের হাতে পড়ে নাই, তাই তাহার বড়াই। আমার সঙ্গে একটিবার তর্ক করিলে, উহার ঠিক পথের মাঝখানে ভাঙ্গা গাড়ির মত দুর্দশা হইবে।”
ইহাতে রাজা খুব শক্ত শক্ত কথা জিজ্ঞাসা করিয়া অষ্টাবক্রকে পরীক্ষা করিতে লাগিলেন। অষ্টাবক্র সে-সকল কথার যে উত্তর দিলেন, তাহা শুনিয়া রাজাকে বলিতে হইল, “ব্রাহ্মণ কুমার, তোমাকে সামান্য মানুষ বলিয়া বোধ হইতেছে না। আমি তোমাকে দ্বার ছাড়িয়া দিলাম; ঐ দেখ বন্দী বসিয়া আছেন।”
তখন অষ্টাবক্র বন্দীকে ডাকিয়া বলিলেন, “হে বন্দী, আইস, আমরা তর্ক করি! আমি যে কথা কহিব, তুমি তাহার উত্তর দিবে;আর তুমি যে কথা কহিবে, আমি তাহার উত্তর দিব। যে ঠকিয়া যাইবে, তাহাকে জলে ডুবাইয়া দেওয়া হইবে।”
এ কথায় বন্দী সম্মত হইলে, অমনি অষ্টাবক্রের সহিত তাঁহার কথার লড়াই আরম্ভ হইল।
বন্দী বলিলেন, “সকল আগুন একই জিনিস;সুর্য একটি মাত্র;ইন্দ্র একজন;যম একজন।”
অষ্টাবক্র বলিলেন, “ইন্দ্র আর অগ্নি দুই বসু, নারদ আর পর্বত দুই দেবর্ষি; অশ্বিনীকুমারেরা দুজন; রথের চাকা দুখানি; স্বামী আর স্ত্রী দুজন।”
এমনি করিয়া দুইজনে বিষম বাক্যযুদ্ধ আরম্ভ হইল! বন্দী যাহাই বলেন, অষ্টাবক্র তাহার চেয়ে বেশি করিয়া বলেন, আবার বন্দী তাহার চেয়েও বেশি করিয়া বলিলে, অষ্টাবক্র আরো বেশি করিয়া বলেন।
যে-সকল জিনিস এক-একটা করিয়া হয়, বন্দী তাহাদের নাম করিলে, অষ্টাবক্র এমন কতকগুলো জিনিসের নাম করিলেন যাহা দুই-দুইটা করিয়া হয়। ইহাতে বন্দী আর কতকগুলি জিনিসের নাম করিয়া বলিলেন, “এই-সকল জিনিস তিন-তিনটা করিয়া হয়।” অষ্টাবক্র তাহার উত্তরে এমন কতকগুলি জিনিসের কথা বলিলেন, সেগুলি চারি-চারটা করিয়া হয়।
এইরূপে চারির উত্তরে পাঁচ, পাঁচের উত্তরে ছয়, ছয়ের উত্তরে সাত, এমনি করিয়া ক্রমে এগারটায় উঠিল। তারপর অষ্টাবক্র বলিলেন, “বৎসরে বারটি মাস, জগতী ছন্দের এক এক চরণে বারটি অক্ষর; প্রাকৃত যজ্ঞ বার দিনে শেষ হয়; আদিত্যরা বার জন।”
এ কথার উত্তরে বন্দী, তেরটা করিয়া যাহা হয়, এমন দুটা জিনিসের নাম করিয়াই, “য়্যাঁ—য়্যাঁ- -’—।” করিয়া মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে অপ্রস্তুত হইয়া গেলেন, আর অমনি অষ্টাবক্র ঐরূপ আরো অনেকগুলি জিনিসের নাম করিয়া তাঁহাকে বেকুব বানাইয়া দিলেন। তাহা দেখিয়া সেই সভাসুদ্ধ লোক হো হো শব্দের সঙ্গে হাততালি দিয়া কি আনন্দ যে করিল, তাহা কি বলিব! বন্দীকে সকলেই অত্যন্ত ভয় করিত, ঘৃণাও করিত। বার বছরের ছেলে অষ্টাবক্র এমন ভয়ঙ্কর লোককে মুহূর্তের মধ্যে হারাইয়া দেওয়াতে তাহারা যেমন আশ্চর্য হইল, তেমনি অষ্টাবক্রের উপরে সন্তুষ্টও হইল।
তখন অষ্টাবক্র বলিলেন, “এই ব্যক্তি অনেক ব্রাহ্মণকে জলে ডুবাইয়া মারিয়াছে। সুতরাং ইহাকে কিছুতেই ছাড়া হইবে না; এখনই হাত পা বাঁধিয়া ইহাকে জলে নিয়া ফেল!”
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, বন্দী অষ্টাবক্রের এই কথা শুনিয়া কিছু মাত্র ভয় পাইলেন না, বরং তাঁহার যেন ইহাতে খুব আনন্দই হইল। তিনি বলিলেন, “জলে ডুবিতে আমি কিছুমাত্র ভয় পাই না! আমি বরুণের পুত্র। এই জনক রাজার ন্যায় আমার পিতাও আজ বার বৎসর ধরিয়া এক যজ্ঞ করিতেছেন;সেই যজ্ঞের জন্য ভাল ভাল ব্রাহ্মণের প্রয়োজন হওয়াতে, আমি ঐ কৌশল করিয়া তাঁহাদিগকে আমার পিতার নিকট পাঠাইয়াছি। ইঁহাদের একজনেরও মৃত্যু হয় নাই। তাঁহারা আমার পিতার নিকট পরম সুখেই আছেন এবং শীঘ্রই ফিরিয়া আসিবেন। অষ্টাবক্র আমার বড়ই উপকার করিলেন; তাঁহার কৃপায়, আমি পিতার নিকট চলিয়া যাইব।”
এ কথা কেহ বিশ্বাস করিল, কেহ করিল না। কিন্তু সকলেই জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, “এখন বন্দীকে কি করা হইবে?”
জনক বলিলেন, “উনি যখন হারিয়াছেন, তখন অবশ্যই তাহার ফল ভোগ করিবেন, তাহাতে সন্দেহ কি?”
অষ্টাবক্র বলিলেন, “বরুণ ত জলের রাজা। এই ব্যক্তি যদি যথার্থই তাঁহার পুত্র হয়, তবে জলে ডুবিতে ইহার কোন ভয়ের কারণ দেখি না।”
বন্দী বলিলেন, “ঠিক কথা! ইহাতে আমার কিছুমাত্র ভয়ের কারণ নাই। আর আমি নিশ্চয় বলিতেছি, অষ্টাবক্র এখনই তাঁহার পিতা কহোড়ের দেখা পাইবেন!”
এ কথা শেষ হইতে না হইতেই, বন্দী যে-সকল ব্রাহ্মণকে জলে ডুবাইয়াছিলেন, তাঁহারা সকলে আবার জল হইতে উঠিয়া আসিলেন। তখন কাহোড় জনককে বলিলেন, “মহারাজ! লোকে এই জন্যই পুত্র লাভ করিতে চাহে। আমি যাহা করিতে পারি নাই আমার পুত্র অনায়াসে তাহা করিল। মহারাজ আপনার মঙ্গল হউক!”
কাহোড়ের কথা শেষ হইলে বন্দী জনককে বলিলেন, “মহারাজ আপনার আশ্রয়ে কয়েক বৎসর পরম সুখে বাস করিয়াছিলাম; এখন আপনার অনুমতি হইলে, আমি আমার পিতার নিকট ফিরিয়া যাইতে চাহি।”
এই বলিয়া বারবার জনককে আশীর্বাদ পূর্বক, বন্দী হাসিতে হাসিতে সমুদ্রের জলে গিয়া প্রবেশ করিলেন।
এদিকে অষ্টাবক্র নিজের পিতাকে সম্মুখে পাইয়া মনের আনন্দে তাঁহার পায়ের ধূলা মাথায় লইলেন;তারপর উপস্থিত ব্রাহ্মণদিগের নিকট অনেক আশীর্বাদ এবং জনকের নিকট রাশি রাশি ধন পাইয়া, কাহোড় এবং শ্বেতকেতুর সহিত গৃহে ফিরিলেন। সেখানে আসিয়া অষ্টাবক্র জননীকে প্রণাম পূর্বক তাঁহার সহিত কিছুকাল কথাবার্তা কহিবার পর, কাহোড় তাহাকে বলিলেন, “বৎস! তুমি শীঘ্র আশ্রমের নিকটের ঐ নদীটিতে স্নান করিয়া আইস।”
কি আশ্চর্য! অষ্টাবক্র নদীতে স্নান করিবামাত্র তাঁহার খোঁড়া পা, নুলো হাত, কুঁজো পিঠ, বাঁকা মুখ, একপেশে নাক আর কোঁকড়ান কান দূর হইয়া, দেবকুমারের মত পরম সুন্দর চেহারা হইল। নদীতে স্নান করিয়া অষ্টাবক্রের অঙ্গ সমান হইয়াছিল বলিয়া তদবধি সেই নদীর নাম ‘সমঙ্গা’ হইয়াছে। অষ্টাবক্রের দেবতার সমান রূপ সত্ত্বেও, এখনো আমরা তাঁহাকে অষ্টাবক্রই বলিয়া থাকি। শিশুকালে বাঁকা শরীর লইয়া তিনি যে মহৎ কাজ করিয়াছিলেন, তাঁহার এই নামটি যেন তাঁহার কথা মনে করিয়া দিবার জন্যই রহিয়া গিয়াছে। তোমরা কিন্তু তাঁহার বাঁকা মূর্তি কল্পনা করিয়া লইও না। তিনি অতি সুন্দর পুরুষ ছিলেন।